আট কবির কবিতা


[সম্পাদকীয় নোট: বিশ্ব কবিতা দিবস ২১ মার্চ। বিশ্বব্যাপী কবিতা পাঠ, রচনা ও প্রকাশনাকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো এই দিনটিকে বিশ্ব কবিতা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে।এবারের কবিতা দিবসে যোগসূত্রের পাঠকদের জন্য আয়োজন আট কবির কবিতা ]

চূর্ণকবিতা
শামীম আজাদ

কখনোই কারো ঋণ
কিছুতেই শোধ হয় না
এ শুধু স্বীকার করা
আর কিছু করা যায় না।

সন্ধ্যার বেহাগ
সৈয়দা আইরিন জামান

এমন নিথর শহর তো চাইনি
বিষণ্ন বেদনায় বিদীর্ণ
দুপুরের আলোয় নামে সন্ধ্যার বেহাগ
রঙ্গনে নেই জীবনের রং-
মৃত্যুর প্রবল ছায়া বিলোল বাতাসে
বেহায়া চাঁদ হাসে কেবল উপহাসে
লোকালয়ের উচ্ছ্বাস নিভে গিয়ে
গ্রেভইয়ার্ডের আলো জ্বলে উঠেছে
এ কেমন উৎসব !!

অগ্নিরথ
দিলারা হাফিজ

ঢের অন্ধকারে বুক পেতে বসে আছে অগ্নিরথ,
স্পর্শমাত্র পুড়ে গেলে ত্বক, এক অত্যাশ্চর্য সরোবর জেগে ওঠে

হিমালয় ছেড়ে হেঁটে এসেছে সে আলোর সংসারে…

উচ্ছ্বল আলোর নিচেই শ্যামাপোকার আত্মাহুতি
চায়নি সে কোনোকালে…

আলোর কৃপাণে ভেঙে ভেঙে গুঁড়ো হয় অনাবৃষ্টি
ভালোবাসার ঐ শব্দনেশা, ছাইভস্মে ফোটা ফুল

কোলাহলে নেভে চন্দনের বন-স্পর্শের বাগান…
কবিতার একতারা বৃষ্টি আসে-যায়-থেমে থেমে।

তর্জনী
আমিনুল ইসলাম

জনে জনে প্রাণের সাগর রেসকোর্সের ঐ মাঠ,
সেই সাগরে মিললো নদী, মিললো পথ ও ঘাট।
আশেপাশের মিছিলগুলোয়-উপচে পড়া ভিড়,
যোগ দিয়েছে সেই মিছিলে–ফিঙ্গে ফেলে নীড়।

বজ্রধ্বনির ঢেউয়ে ভাঙে-ভিড়-সাগরের পাড়।
ঢেউয়ের টুঁটি ধরবে টিপে?-সাধ্য এমন কার !
ঝড় দেখি না,–কেমনে উঠে উথাল পাথাল ঢেউ!
ঝড় ওঠেনি,-ঝড়ের চেয়েও শক্তিশালী কেউ!
তর্জনীটার ডগায় দ্যাখো তেলেসমাতির বাও,
তার দোলাতে দোলে সাগর,–তার নাচনে নাও।

তুঙ্গে যখন জনজোয়ার–উদ্বেলিত কান!
আঙুল ওই শুনিয়ে দিলো স্বাধীনতার গান!

চণ্ডাল সময়
শাহ মতিন টিপু

হেমলক নয় শরাবই তোমায়
করতে দিয়েছিলাম পান
আর বিষ ভেবেই তা
খেয়ে নিলে তুমি।
জানলে এমন বিষের জ্বালা
নিতাম আমিই তুলে
আমার মর্মমূলে-
পুড়তাম না আর অহর্নিশ
বৈতালী বিরাগে-
নষ্ট অনুরাগে।
অন্তরীক্ষে বৃক্ষ রুয়ে
পড়ে আছি ভুলের ভুঁইয়ে
বসন্ত ফাল্গুনে দেখি
চত্তিরের চণ্ডাল
কাটা নিয়ে জেগে ওঠে
সকাল সকাল।

দুঃখ নদী হয়
পিওনা আফরোজ

কতকিছু ছেড়ে যেতে হয়
কতকিছুকে বিদায় জানাতে হয়
কত স্বর্ণালী সন্ধ্যা,
ঝর্ণার জল, শিশিরের কান্না
কত স্মৃতি বিস্মৃতিতে হারায়।
কপাল ভেদ করা দুঃখ নদী হয়
সময় তবু বয়ে যায়
পথ থেকে পথে
প্রতিটি জীবনে।

কৃত্তিকা
ইসমত শিল্পী

টিলার উপরে থেমে আছে শ্বাস
গড়িয়ে পরলেই মাটি
উড়ে গেলেই মরলো আশ্বাস
আর
থেমে থাকলে কিছু-একটা হবে
ধীর-বিচ্ছেদ অথবা বিশ্বাস

প্রিজম ফ্যান্টরি
জোবায়ের মিলন

ডানা থেকে ময়ূর ভেঙে পড়লে
চাঁদ ডুবে যায়
যায় তো,
আর মুখ থেকে গোলাপজল শুঁকিয়ে গেলে
অমাবৎসা
রোধ করার কেউ থাকে না।
বসন্ত এলেও পাতা ফোটে না
হৃদয় বন্ধা হলে।
ধূসর বালির স্তূপে শত রঙ বুজে থাকে।