তিনটি কবিতা ॥ লিপি নাসরিন


ফিরি
বসন্তের জন্য প্রতিক্ষায় থাকে পাতাঝরা গাছ, আমার জন্য তোমার অপেক্ষা মরুঝড়ে উড়ে যায়।আমাদের কামনাপাত্র ভরে থাকে নিদ্রালু স্বপ্নে ; আমরা কাছাকাছি আসতেই চামড়ার গভীর ভাঁজগুলো হেসে ওঠে। তুমিও যেমন, আমার অলঙ্কারের শব্দে চমকে উঠে পর্দার ওপাশে সরে গেলে; স্বপ্নে ফিরে গেলে বহুদূর।আমি তাকিয়ে থাকি কুয়াশার ভেতর আর জলের নীল ঢেউ ভাঙে, আমি তাকে মুগ্ধতায় ফিরিয়ে দিই এক সুনিপুণ সৌন্দর্যের কাছে, অলৌকিকতার আশায়।প্রহেলিকাময় চাতুর্যে আমাদের উড়তে চাওয়া ডানাগুলোর পালক খসে পড়ে।আমরা নিজেদের কাছে ভীষণ একা হতে হতে গহন নিমগ্নে সূর্যের ক্লান্তির কাছে ফিরি।

স্নায়ুর জলসায়
যে নীরবতা আমাকে উসকে দেয় উপাসনায়
সমাহিত মর্মে জাগায় উষ্ণ ভয়
আমি তার অনুসারী হয়ে উঠতে থাকি
তোমাকে খুঁজি সেই অবধ্য বোধে।
এখানে এসো না আর
প্রবেশদ্বারে এখন ঘুণে ধরা আকাশ
ঝরঝরে রোদে তামাটে হয় সবুজশৈবাল
জমিনের সিঁথিতে ভরে থাক ব্রাহ্মীশাক।
স্মৃতিতে ভাগ বসিয়েছে আলোকলতা
বুনোফুলে ভরে আছে বিরানভূমি
সব শস্যক্ষেত্র নির্বাসিত আজ
হিমশীতল রাতের আঁধারে।

তোমার অবশিষ্ট ছায়াটুকু মুছে যেতে চায়
আমি তাকে টেনে ধরি আঁচলচাবিতে
তবু হারিয়ে যায় নাকি হারিয়ে ফেলি
দূর প্রপাতের ফুলে ওঠা নগ্নতা।
নির্ভয়ের নানারূপ অঙ্কিত দীর্ঘশ্বাস
মহানীরবতায় স্নায়ুর আহ্বান শুনি
চারিধারে গুঞ্জরিত প্রতিদান
সখ্যতা পায় ভ্রমরের কলধ্বনি।

আরো কিছু সময় তোমাকে চাইতে গিয়ে
মিলিয়ে যায় ক্রমে
স্নায়ুর জলসায় তারও হিসেব লেখা রয়
জমাট শ্বাসাক্ষরে ।

জেগে ওঠা সত্য
সূর্যের ওম ছুঁয়ে শিশির পলাতক
আমিও পালাতে চাই,
কুয়াশার দ্বিধা কাটে
সূর্যের লিরিক মুখস্থ করি,
শূন্যে বসিয়ে রাখি আস্ত একটা ঝাড়বাতি
আজ প্রার্থনায় জাগাতে পারিনি নক্ষত্রের সামিয়ানা।
জমিনে সেজদায় গেঁথে রাখি সারি সারি শব্দ
মাথা তুলতেই কোথায় যেন হারিয়ে যায় সব, ঘূর্ণিপাকে জেগে ওঠে আমার চারিদিক
অতঃপর কোন নিয়ামতকে আমরা অস্বীকার করতে পারি?
এক ঝলক তরঙ্গ ঢেউ ফেলে যায়
পুঁতির দানা থেকে ঝলকে ওঠে রেডিয়াম,
আমার পরাসত্য জেগে ওঠে এক মহারাতে
সেদিন কেউ ছিলো না, একা আমাকে
ডেকেছিল অন্ধকারের সাদা দ্যুতি
বলেছিল, আমার ওমের রেখা আছে
মাটির কৈশিক অণুতে।
পৃথিবীর সঙ্গীত কখনো থামে না
ইসরাফিলের ঠোঁট ছুঁয়ে জেগে আছে বাঁশি।