কবিতার জন্য কাহ্নপা সাহিত্য পদক ২০২৪ ॥ আমিনুল ইসলাম


নওগাঁ জেলার প্রতিনিধিত্বকারী সাহিত্য-সংস্কৃতি বিষয়ক অপেক্ষাকৃত নবীন সংগঠন নওগাঁ সাহিত্য পরিষদ ২০২৪ সালে প্রবর্তন করলো ‘কাহ্নপা সাহিত্য পদক’।

কবিতায় উদ্বোধনী ‘কাহ্নপা পদক ২০২৪’ লাভ করে সম্মানিত বোধ করছি আমি। গত ৮-৯ মার্চ (২০২৪) দুই দিনব্যাপী আয়োজিত লেখক সম্মেলনের ২য় দিন হলভর্তি অনুষ্ঠানে আমার হাতে ‘কাহ্নপা পদক ২০২৪’, ক্রেস্ট এবং দশ হাজার টাকার চেক তুলে দেন প্রধান অতিথি নওগাঁ জেলা পরিষদের সম্মানিত চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট এ কে এম ফজলে রাব্বি।তিনি আমার গলায় নওগাঁ সাহিত্য পরিষদের উত্তরীয় পরিয়ে দেন।

পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে সভাপতি ছিলেন নওগাঁ সাহিত্য পরিষদের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ফাল্গুনী রানী চক্রবর্তী।বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বগুড়া লেখক চক্রের সভাপতি কবি ইসলাম রফিক, নওগাঁর তথ্য সেবা অফিসার বিশিষ্ট বাচিকশিল্পী তানিয়া খন্দকার এবং কথাসাহিত্যিক রবিউল করিম।

মঞ্চে আরও ছিলেন নওগাঁ সাহিত্য পরিষদের সভাপতি কবি অরিন্দম মাহমুদ এবং সাধারণ সম্পাদক কবি আশরাফুল নয়ন।ছোটকাগজ সম্পাদনার জন্য কাহ্নপা সাহিত্য পদক ২০২৪ দেওয়া হয় ‘দাগ’ সম্পাদক মিজানুর রহমান বেলালকে।

প্রথম দিনের অনুষ্ঠানে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন নওগাঁ জেলা প্রশাসক মো. গোলাম মওলা।বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী কবিকুঞ্জ এর সাধারণ সম্পাদক কবি আরিফুল হক কুমার, বগুড়া লেখক চক্রের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক বকুল, মৃদঙ্গ সম্পাদক কবি কামরুল বাহার আরিফ, নওগাঁ জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি আবু বকর সিদ্দিক, নওগাঁর জেলা কালচারাল অফিসার মো. তাইফুর রহমান এবং আরও কয়েকজন।সভাপতি ছিলেন নওগাঁ সাহিত্য পরিষদের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শামসুল আলম।

সাহিত্যের ভুবনে আমি বরেন্দ্রভূমির মুগ্ধ শব্দচাষি।নওগাঁর বিভিন্ন ঐতিহাসিক অনুষঙ্গ নিয়ে আমি অনেক কবিতা লিখেছি।এক কথায় বরেন্দ্রভূমি হচ্ছে আমার কাব্যভাবনার তীর্থভূমি।আমি অস্ট্রেলিয়ার ব্লু মাউন্টেইন এ দাঁড়িয়েও সেখানকার আদিবাসী মানুষকে দেখার সময় বরেন্দ্রভূমির মানুষের কথা মনে উদয় হয়েছে।আমি সেই অনুভব ও উপলব্ধি নিয়ে লিখেছি:
‘আমি ঘুরি পথে ও প্রান্তরে; সিডনির ব্লু মাউন্টেনে
কৃষ্ণকায় আদিবাসি সাইমনকে দেখে
এই মনে হয়েছিল-
পুরোনো পুঁথির মতো গায়ে তার পরিচিত ঘ্রাণ;
যেন সে আমারই সেই আদি বংশধর-
শিমুলের ফুল গুঁজে তাকিয়ে থাকতো
শবরীর চুলের খোঁপায়;
তুফানের ঢেউ লেগে নৃতাত্ত্বিক তরীখানা
পর্বতের কোল ছেড়ে
ভিড়েছিল একদিন
করতোয়া তীরবর্তী বৃক্ষের পাড়ায় !
আমি তার পাশে বসে উঠিয়েছি বেশ কিছু ছবি;
আমি কি বাতিকগ্রস্ত?
নাকি আমার রয়েছে কোন্ অদ্ভুত ইন্দ্রিয়-
যা আমাকে জাগিয়ে দেয়
ইতিহাসের মোড়ে মোড়ে নিদ্রিত উঠোনে!’

বরেন্দ্রভূমি হচ্ছে চর্যাপদ এর কবিদের পীঠস্থান।কাহ্নপা নওগাঁর সোমপুর বিহার (পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার)-এ বসে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক পদ রচনা করেছিলেন।তার নামে সাহিত্য পদক প্রবর্তন একটি মহৎ উদ্যোগ।এটা নিজেদের শেকড়ের সঙ্গে শৈল্পিক অচ্ছেদ্যতায় সংশ্লিষ্ট থাকার প্রেমময় রূপ।আমি এই পুরস্কারের ধারাবাহিকতা এবং উত্তরোত্তর সাফল্য ও সার্থকতা কামনা করি।আমার মনে হয়, এ ধরনের সাহিত্য পুরস্কার আরও বহু আগেই বরেন্দ্রভূমি থেকে চালু করা সমীচীন ছিলো।বাংলা সাহিত্যের শুরু চর্যাপদ দিয়ে এবং সেই চর্যাপদের উৎসভূমি হচ্ছে বরেন্দ্র বা প্রাচীন পুণ্ড্রবর্ধন।কথায় বলে, ভালো কাজ দেরিতে হলেও ভালো।মহৎ উদ্যোগ, চমৎকার আয়োজন এবং সফল অনুষ্ঠান-এই সবকিছুর জন্য আমি নওগাঁ সাহিত্য পরিষদের সম্মানিত সভাপতি অরিন্দম মাহমুদ, সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল নয়ন, উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ফাল্গুনী রানী চক্রবর্তী, উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শামসুল আলম এবং অন্যান্য সদস্যের আবারও আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।