কোন পাখি সেরা ॥ নাসরিন সুলতানা


ছবি: ইন্টারনেট

১.
[বাবুই মন খারাপ করে বসে আছে। চড়ুই এসে তার পাশে বসল।]
চড়ুই: কী হয়েছে? মন খারাপ কেন?
বাবুই: বাসাটা ঝড়ে পড়ে গেল।
চড়ুই: আদর্শ পাড়ার টুনটুনিরা খুব সুন্দর করে বাসা বানায়। আকাশ ভেঙে পড়লেও ওদের ডিম ভাঙবে না।তুমি ওখানে যাও।

২.
বাবুই: তোমরা নাকি খুব সুন্দর করে বাসা বানাতে পারো। দয়া করে আমাকে একটু শেখাও।
টুনটুনি: আমরা এখন আর ভালো বাসা বানাতে পারি না। কেন যেন আমাদের বাসাগুলো পড়ে যায়। চৌধুরি পাড়ার কাকগুলোও আমাদের চেয়ে ভালো বাসা বানায়।

৩.
বাবুই: আমাকে একটু বাসা বানানো শেখাও। তোমাদের বাসা নাকি পড়ে না।
কাক: এখন সব চেয়ে ভালো বাসা বানায় রায় পাড়ার কোকিলগুলো।
বাবুই: কোকিল বাসা বানায়! নিশ্চয় সে বাসা অনেক শক্ত হয়। আমি এখনই যাচ্ছি। দেরি হয়ে গেলে আবার শুনব তারা এখন আর ভালো করে বাসা বানাতে পারে না।তখন আবার অন্য পাড়ায় যেতে হবে।
কাক: হ্যাঁ, হ্যাঁ, এখনই যাও।

৪.
বাবুই: তোমরা কীভাবে বাসা বানাও আমাকে একটু বলো।বিনিময়ে তুমি কী চাও তাও বলো।
কোকিল: তুমি তো কাঁঠাল পাতা খেতে পারো না।তোমার যোগ্যতা একটা ছাগলের চেয়েও কম।তুমি কী করে আশা করো যে তুমি ভালো করে বাসা বানাতে পারবে?
বাবুই: (রাগ করে) আমি কেন কাঁঠাল পাতা খাবো! আমার তো ছাগল হওয়ার দরকার নেই। ছাগল কি হাজার বার চেষ্টা করলেও আমার মতো করে বাসা বানাতে পারবে?
কোকিল: (গলায় জোর দিয়ে) তুমি কার সঙ্গে রাগ করছ? তুমি জানো, আমি স্কুটি চালাতে পারি? আমি দশজনকে সাইকেল চালানো শিখিয়েছি।
বাবুই: যার যোগ্যতা যত কম সে তত বেশি মিথ্যে কথা বলে। যে যত মিথ্যে বলে তার গলায় তত জোর। স্কুটি চালানো পাখির কাজ নয়। যে পাখি বাসা বানাতে পারে না সে এরোপ্লেন চালাতে পারলেই বা কী! ডিম পাড়ো কিন্তু বাচ্চা ফোটাতে পারো না। পারো শুধু মানুষের মন ভোলাতে। ডিমে তা দিতে হলে না খেয়ে থাকতে হয়। গায়ে জ্বর ওঠাতে হয়। এগুলো জানো? কী জানো তুমি?

কোকিল: কী বাসা বানাও তুমি? ঝড়ে তো পড়ে যায়।
বাবুই: বাসা তো বানাতে পারি এবং সবার চেয়ে ভালোই পারি।বলি না বলে তোমরা আমাকে পেয়ে বসেছ।আমার বাসায় বৃষ্টির পানি পড়ে না। অতিরিক্ত ঝড়ে তো বড়ো বড়ো গাছ, বড়ো বড়ো ঘর, অনেক কিছুই পড়ে যায়। আমাকে আর সেই কথা বলে ছোটো করা যাবে না।বাসা বানানো শিখতে হলে তোমরা সবাই আমার কাছে যেয়ো।
[কোকিল একটু ভাবল।]
কোকিল: ঠিকই বলেছ।আসলে আমি বাসা বানাতে পারি না।কাক তোমাকে মিথ্যে বলেছে।তাই আমিও অহংকার দেখিয়েছি।যার যোগ্যতা নেই সে তো মিথ্যে বলেই অহংকার করে।আমি পাপ করেছি।আমাকে ক্ষমা করে দাও।
বাবুই: আচ্ছা, ঠিক আছে। অন্যায়ভাবে আর কারো সঙ্গে গলায় জোর দিয়ে কথা বলবে না।তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম।
কোকিল: চলো, আমরা দুজন মিলে চোধুরী পাড়ায় যাই।
বাবুই: চলো।

৫.
কোকিল (কাককে): তুমি বাবুইকে কেন মিথ্যে বললে! ও কত কষ্ট করে আমাকে খুঁজে বের করেছে!
কাক (বাবুইকে): আমার ভুল হয়ে গিয়েছে। আমাকে তুমি ক্ষমা করে দাও। আমি মানুষের খাবার কেড়ে নিই ঠিকই কিন্তু মিথ্যে কথা বলি না। জীবনে আর এ রকম কাজ করব না।
বাবুই: আচ্ছা, তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম। এখন বাসা বানানো শেখাও।
কাক: কী বলছ তুমি? তুমি টুনটুনির কথা বিশ্বাস করেছ? তোমার চেয়ে ভালো বাসা কেউ বানাতে পারে?
বাবুই: (অবাক হয়ে) টুনটুনিও মিথ্যে বলেছে!
কোকিল (বাবুইকে): মন খারাপ করো না। চলো, আমরা তিন জন আদর্শ পাড়ায় যাই। টুনটুনিটা কেন তোমাকে মিথ্যে বলল শুনি।

৬.
কাক (টুনটুনিকে): তুমি কেন বাবুইকে মিথ্যে বললে? তুমি জানো না ও কেন বাসা বানাতে চায়?
টুনটুনি (বাবুইকে): বিশ্বাস করো, আমার একটুও মনে ছিল না তোমার শরীরটা খারাপ। তুমি যখন চড়ুইর কথা বিশ্বাস করেছ তখন মনে হলো আমিও একটু মজা করি। তাতে যে তোমার কষ্ট হবে সে চিন্তা আমি করিনি।
বাবুই: চড়ুই তো মানুষের ঘরে থাকে। তার বাসায় বৃষ্টি পড়বে কী করে? সে তো আমাকে মিথ্যে বলতেই পারে।
টুনটুনি: জীবনে কোনো দিন মিথ্যে কথা বলব না। আমাকে তুমি ক্ষমা করো।
বাবুই: আমি সবাইকে ক্ষমা করি। কাউকে শাস্তি দিই না। (আকাশের দিকে তাকিয়ে) ঐ যে চড়ুই এসেছে।
[ওরা সবাই আকাশের দিকে তাকালো। চড়ুই এসে ওদের কাছে বসল।]
চড়ুই: কী হয়েছে? তোমরা সবাই একত্র হয়েছ কেন?

কোকিল (চড়ুইকে): তুমি কেন বাবুইকে মিথ্যে বললে? ও তো তোমার কাছে বুদ্ধি চায়নি। তুমি নিজে গিয়ে ওর কাছে বসেছ। ওর বাসা পড়ে গিয়েছে সেটা একমাত্র তুমিই জানো। ও টুনটনির কাছে গিয়েছে। কাকের কাছে গিয়েছে। আমার কাছে গিয়েছে এবং সবাই তাকে অন্য একটা পাড়ায় যেতে বলেছে। একটা ঘর ভাঙা পাখির সঙ্গে এ রকম করা যায়?
চড়ুই (বাবুইকে): আমি তো এত কিছু চিন্তা করিনি! আমি মজা করে বলেছি। আমি অনেক বড়ো অন্যায় করে ফেলেছি। তোমার যত ইচ্ছে শাস্তি দাও। তোমরা সবাই মিলে আমাকে শাস্তি দাও। (মাথা নিচু করে) আমাকে তোমরা মেরে ফেল।
বাবুই: যে অনুতপ্ত হয় তাকে কি শাস্তি দেওয়া যায়?
চড়ুই: তা হলে ক্ষমা করো। আমি তোমাকে বাসা বানানোর কাজে সাহায্য করব।
টুনটুনি (বাবুইকে): আমিও তোমাকে সাহায্য করব।
কাক (বাবুইকে): হ্যাঁ, হোগলা পাতা, তাল পাতা আর যা বলবে সব কিছু আমি এনে দেবো। আমি এই পাপ থেকে মুক্তি চাই।
কোকিল (বাবুইকে): আমিও মুক্তি চাই। আমি তোমার বন্ধু হয়ে পাশে থাকতে চাই।
বাবুই: এ তো খুবই ভালো কথা! এসো, আমরা সবাই বন্ধূ হয়ে যাই।
[সবাই মাথা একত্র করল।]