দুটি অনূদিত গল্প ॥ অনুবাদ মোহাম্মদ আসাদুল্লাহ


দৃশ্যমানতা
‘আবার আমি সৌন্দর্যের কথা ভাবছি! ভাবছি যে সুন্দর কিছুকে পাওয়ার জন্যে আমরা কতই না হন্যে হয়ে খুঁজি! অথচ পৃথিবীর ইতিহাসের সাপেক্ষে একজন মানুষের জীবনের ব্যপ্তি এতই ছোট যে, (বলা যেতে পারে চোখের এক পলক) জন্ম হতে মৃত্যু পর্যন্ত সময়ও আমাদের জন্যে খুবই কম সেটিকে জাকজমক ও আড়ম্বরপূর্ণভাবে যাপন করার জন্যে।

এই যেমন এই মুহূর্তে সূর্য এমনভাবে দেবদারু গাছের পেছনে নেমে আসছে যে, আমার পক্ষে এটা সূর্যোদয়, না-কি সূর্যাস্ত তা বলা সম্ভব নয়। এই সময়ে রক্তিম হতে থাকা পৃথিবীকেও আমার কাছে একইরকম মনে হয়; আমি কোনটা পূর্ব ও কোনটা পশ্চিম তার খেই হারিয়ে ফেলি।

আজ সকালের রঙগুলোও এমনকিছুর আভা ছড়িয়েছে, যা কিছুক্ষণ আগেই চলে গেছে।আমি সময় পরিভ্রমণের (time travel) কথা ভাবছিলাম এবং টুলশেড-ছাদের ওপরে বসে সূর্য ডুবে যাওয়া দেখছিলাম। আমি খুব বেশি বিস্মিত হলাম না দেখে যে মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যেই সেটা বদলে দিলো যেভাবে আমরা দেখে থাকি তার ধরনকে, আমাদেরকেও। কারণ সূর্যাস্তও বেঁচে থাকার মতো অস্তিত্বশীল হয় কেবলমাত্র নিজের মিলিয়ে যাওয়ার মুহূর্তে।

আড়ম্বরপূর্ণ হবার জন্যে কাউকে তোমাদের প্রথমে দেখতে পারতে হবে, এবং দেখতে পারাই তাকে প্রলুব্ধ করবে তোমাকে খুঁজতে।’

মূল: ওশেন ভং, উপন্যাস-অন আর্থ উই আর ব্রিফলি গর্জিয়াস

আইনের প্রবেশদ্বার
‘লোকটা আর বেশিদিন বাঁচবে না। মরে যাওয়ার আগে দীর্ঘজীবনের অভিজ্ঞতাগুলো তার মাথার এক বিন্দুতে জড়ো হলো একটা প্রশ্ন হিসেবে, যা সে এখনো দারোয়ানকে জিগ্যেস করেনি।

হাত নেড়ে সে তাকে কাছে ডাকল, যেহেতু নিজের শক্ত হয়ে যাওয়া শরীরকে আর তুলতে পারছিল না। দারোয়ানকেই বাঁকা হয়ে তার দিকে নীচু হতে হলো। কারণ, দুইজনের মধ্যকার উচ্চতার পার্থক্য ইতিমধ্যে পরিবর্তিত হয়ে লোকটার জন্যে যথেষ্টই অসুবিধা সৃষ্টি করেছিল।

‘এখন কী জানতে চাও তুমি, হে অতৃপ্ত মানুষ?’ দারোয়ান জিজ্ঞেস করল।’

‘সবাই চেষ্টা করে আইনের কাছে পৌঁছাতে,’ লোকটা বলল, ‘এটা কেমন করে হয় যে এতগুলো বছরের মধ্যে কেবলমাত্র আমিই আইনের প্রবেশাধিকার চেয়েছি?’

দারোয়ান বুঝতে পারল যে লোকটা তার শেষ অবস্থায় পৌঁছে গেছে। সুতরাং লোকটার দুর্বল স্নায়ুগুলো যাতে তার শব্দগুলো বুঝতে পারে, সেজন্যে সে তার কানে গর্জন করে বলল:
‘আর কাউকে কখনো এখানে প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়নি, কারণ এই প্রবেশদ্বারটি শুধু তোমার জন্যে তৈরি করা হয়েছিল।আমি এখন এটা বন্ধ করে দিচ্ছি।’

মূল: ফ্রানজ কাফকা, উপন্যাস-দ্য ট্রায়াল

[যোগসূত্রের পাঠকদের জন্য দুজন বিখ্যাত লেখকের লেখা থেকে গল্পগুলো অনূদিত ]