বাংলা উপন্যাসে বিধবা : বঙ্কিম-রবীন্দ্রনাথ-শরৎ ॥ রকিবুল হাসান


‘বাংলা উপন্যাসে বিধবা: বঙ্কিম-রবীন্দ্রনাথ-শরৎ’ মোহাম্মদ নূরুল হকের গবেষণা গ্রন্থ।এ বইটি প্রকাশের আগে থেকেই জানতাম, নূরুল হক এরকম একটি কাজ করছেন।এর আগেও তিনি আরও কয়েকটি প্রবন্ধগ্রন্থ রচনা করেছেন।সেগুলোও আমার পাঠের আয়ত্বে আছে।

গবেষণাকর্ম বললে এটিই নূরুল হকের প্রথম গ্রন্থ।এর আগেও তিনি গবেষণামূলক প্রবন্ধ লিখেছেন, বিভিন্ন জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।তাঁর দুটি প্রবন্ধ বিশেষজ্ঞদের মূল্যায়ন সাপেক্ষে ‘এনইউবি বাংলা সাহিত্য সংস্কৃতি গবেষণা পত্রিকা’য় প্রকাশের সুযোগ আমার হয়েছিল।নূরুল হক গবেষণা এই কর্মটি বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি বা প্রমোশনের আশায় বা উদ্দেশ্যে করেননি।একেবারেই আপন তাগিদে, নিজের আনন্দে করেছেন। আমার সঙ্গে এ বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে তাঁর বহুবিধ আলোচনা হয়েছে।

শিক্ষাজীবনে কোনো পর্বেই তিনি অ্যাকাডেমিকভাবে সাহিত্যের কোনো গবেষণাকর্মের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না।কিন্তু তিনি যখন বাংলায় এমএ করতে এলেন নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ে, কিছুদিনের মধ্যেই তাঁর মধ্যে চিন্তা চেতনায় একটু হলেও পরিবর্তন ঘটে।গবেষণাকর্মের প্রতি তিনি আগ্রহী হয়ে ওঠেন।যা আগে তাঁর মধ্যে ছিল না।কিন্তু সাহিত্যবিষয়ে তাঁর পড়ালেখা জানাশোনা নিজস্ব চিন্তা-চেতনা ছিল উচ্চমার্গের।সেখান থেকেই তিনি সাধারণত যেভাবে যে ধরনের প্রবন্ধ লিখে থাকেন, তাতে পরিবর্তন আনলেন, সচেতনভাবে এবং একেবারেই নিয়ম-কানুন মেনে গবেষণা প্রবন্ধ লেখা শুরু করলেন।এজন্য তিনি নতুন করে কিছুদিন শুধুই গবেষণা বিষয়ক বই পড়েছেন, একই সঙ্গে গবেষণার নিয়ম-কানুন রপ্ত করার চেষ্টা করেন। ‘বাংলা উপন্যাসে বিধবা: বঙ্কিম-রবীন্দ্রনাথ-শরৎ’ এ গ্রন্থটি তারই প্রয়াস।

বাংলা সাহিত্যের কালজয়ী মনীষী বঙ্কিম-রবীন্দ্রনাথ-শরৎচন্দ্রের উপন্যাসের বিধবাবিষয়ক ব্যাপারটি প্রধান হিসেবে আনলেও বাংলা সাহিত্যে শুধু নয় বাঙালির জীবন ও সমাজে সতীদাহ প্রথা থেকে বিধবা সংকট, সেই সময়ের সমাজচিত্র ও বিধবা বিবাহের পুরো ইতিহাস তথ্যসমৃদ্ধভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন এবং তা বাংলা সাহিত্যে কতোটা প্রভাব ফেলেছিল, তাও।

এ গ্রন্থে মোট পাঁচটি অধ্যায় আছে।‘বঙ্কিম-রবীন্দ্রনাথ-শরৎ: বিধবা সমস্যা’, ‘বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় : বিষবৃক্ষ থেকে কৃষ্ণকান্তের উইল’, ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর: চোখের বালি থেকে চতুরঙ্গে’, ‘শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়: বড় দিদি থেকে পল্লীসমাজ’, ও ‘বঙ্কিম-রবীন্দ্রনাথ – শরৎ: চিন্তার সাদৃশ্য-বৈসাদৃশ্য’-এ সব অধ্যায়ে তিনি বিষয়ভিত্তিক আলোচনার মধ্যে থেকে গতানুগতিক চিন্তা বা অন্যদের মতামত পাঠকের ওপর শুধু শুধু চাপিয়ে দিয়ে গৎবাঁধা গ্রন্থ রচনা করেননি।তিনি নিজের চিন্তা, মতামত ও সিদ্ধান্ত দেওয়ারও চেষ্টা করেছেন, যৌক্তিক আলোচনা ও বিশ্লেষণ সাপেক্ষে।সেটা কতোটা সফলভাবে তিনি পেরেছেন, সেটাই আলোচনার বিষয় হতে পারে।

ব্যক্তিগতভাবে গবেষক মোহাম্মদ নূরুল হককে অভিনন্দন জানাই, চমৎকার এ গবেষণাকর্মের জন্য।