নদীর মানুষ, আমার প্রথম উপন্যাস ॥ অমর মিত্র


অমর মিত্রের উপন্যাস সমগ্রের প্রচ্ছদ। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

১৯৭৫ সালের ডিসেম্বরে আমি গোপীবল্লভপুরে বদলি হই। তখন সারা ভারতে জরুরি অবস্থা। উচ্চ পদস্থ সরকারি কর্মচারীদের হাতে অনেক ক্ষমতা। সেই পোস্টিং ছিল অনেকটাই শাস্তিমূলক, আবার আমার কাছে আশীর্বাদ স্বরূপ। ইউনিয়ন করার কারণে সেই দূরবর্তী অঞ্চলে পাঠানো। সেই হল্কা ক্যাম্পের নাম ছিল অমর্দা হল্কা ক্যাম্প। কিন্তু সেই গ্রামে উপযুক্ত বাড়ি মানে মাটির বাড়ি টালির চাল ছিল না, দোকানপাট ছিল না, তাই ক্যাম্প হয় বংশীধরপুরে। বংশীধরপুর অনেক দূর।

একবার পাকাপাকি ভাবে বংশীধরপুর থেকে ফিরে এলে আর যাওয়া যায় না। ১৯৭৫-এর ডিসেম্বরে গিয়ে ১৯৭৬-এর ডিসেম্বরে চলে এসে আর যেতে পারিনি সেই গ্রামে। কিন্তু যতদিন ছিলাম বংশীধরপুরে, পনেরদিন অন্তর বা মাসান্তে কলকাতা এসে আবার ফিরে যেতে হতো। ফিরে যেতে কত কষ্ট! কলকাতা থেকে কেওনঝোড়- বারিপদার পথে জামশোলা ব্রিজ সিং কোম্পানির বাসে ছয় থেকে সাত ঘন্টা। বাবুঘাট থেকে ছাড়ত সেই বাস। তখন ছ’নম্বর জাতীয় মহাসড়ক ছিল এখনকার চেয়ে দুই তৃতীয়াংশ কম চওড়া। ভাঙাচোরা। জামশোলা ব্রিজ সুবর্ণরেখা নদীর উপরে। সেখানে পশ্চিমবঙ্গ, বিহার ( এখন ঝাড়খন্ড ) ও ওড়িশা মিলেছে।

ব্রিজ থেকে পুবে বংশীধরপুর হেঁটে ১ ঘন্টা ৪৫ মিনিট। পথ বলতে নেই। জামশোলা ব্রিজ জায়গাটি ওড়িশার ভিতরে পড়ে। এখান থেকে বাম দিকে অর্থাৎ পুবে বাংলা। উত্তর পশ্চিমে হাইওয়ে ছুটে গেছে ওড়িশার বারিপদার দিকে। পুবে শাল জঙ্গল, সেই জঙ্গলের ধারে সুবর্ণরেখা। তার দুই তীর প্রস্তরাকীর্ণ। জায়গাটির নাম হাতিবাড়ি। হাতিবাড়ি এখন ভ্রমণকারীদের কাছে প্রিয় জায়গা। তখন হাতিবাড়িতে একটি ফরেস্ট বিট অফিস ছিল। বিট অফিসার ছিলেন শীর্ণকায় এক ব্যক্তি। ফরেস্ট ডিপারট্মেন্টের বাংলো মানে বিট অফিসারের কোয়ার্টার ছিল। আমি পুজোর পর ফেরার সময় বিট অফিসারের অনুরোধে তাঁর বাংলোয় ছিলাম। বেশ ঠান্ডা পড়ে গিয়েছিল তখনই। অনেক রাত অবধি নানা অভিজ্ঞতার কথা বলেছিলেন তিনি। সেই বছর শারদীয় পরিচয়ে আমি প্রথম লিখি। উনি কোনো পাত্তাই দিলেন না। সাহিত্য শিল্পর ধারে ছিলেন না। আমি যা বুঝেছিলাম, গ্রামের মানুষগুলিকে তিনি মানুষ বলে মনে করতেন না। বিশেষত অনুন্নত জনজাতি, সাঁওতালদের। গ্রামের গরিব মানুষ যারা জঙ্গলে যেত কাঠ-পাতা সংগ্রহ করতে, তারা হেনস্থা হতো বনরক্ষী, এবং বিট অফিসারের হাতে।

এমনিতে আমাকে জামশোলা ব্রিজ থেকে বংশীধরপুর যেতে ১ ঘন্টা ৪৫ মিনিট হাঁটতে হত। রাস্তা মানে জঙ্গল, নামো জমি মানে চাষ জমি, চড়াই উৎরাই। টিলা টিকরি, ঝোরা পার হয়ে যেতে হত। অপূর্ব সে পথ। আবার মন খারাপের পথও বটে। ঐ দূরে পায়রাকুলি গ্রাম টিলার উপরে। তারপরে আবার জঙ্গল। ডানদিক দিয়ে সুবর্ণরেখা নদী বয়ে যাচ্ছে। নদী জামশোলা হাতবাড়ি থেকে নেমে এসেই ছড়িয়ে গেছে দুদিকে। মস্ত তার বিস্তার। দুই দিকে দু’হাত ছড়িয়ে দিয়েছে যেন। জল অনেকটা দূরে, মস্ত বালুচর পার হয়ে যেতে হয়। বংশীধরপুরে দণ্ডপাট ভাইদের প্রতাপ ছিল। সম্পন্ন গৃহস্ত। তাঁদের বাড়িতেই হল্কা ক্যাম্প। মানে হল্কা ক্যাম্পের বাড়িটির মালিক তাঁরা। তাদের বসত বাড়িতে মাটির প্রাচীর। বড় ভাইয়ের দুই বিয়ে। দুই স্ত্রীই এক বাড়িতে থাকেন।

ছোট ভাই মিশুকে বেশি। আর একটি যুবকের কথা মনে পড়ে। নাম ভুলে গেছি। বিকেলে আসত আমাদের ক্যাম্প অফিস কাম আশ্রয়ে। মাটি কিংবা ইট-মাটির দেওয়াল, মাটির মেঝে, বড় দাওয়া। তিনটি ঘর। দাওয়ায় কর্মচারীরা তাসের আসর বসাত সন্ধে বেলায়। আমি ঘরে কাঁচের লম্ফতে লিখতাম সুটকেস ডেস্ক করে মাদুরে বসে। হ্যাঁ, সেই যুবকের কথায় ফিরি। যুবকটি ছিল শান্ত প্রকৃতির। সে আদিবাসি, মুসলমান আর নক্সালদের ঘৃণা করত। হিন্দু রাজ্যের স্বপ্ন দেখত । জরুরি অবস্থায় হিন্দুত্বের দলগুলি নিষিদ্ধ হয়েছিল। অবাক লাগত তার কথা শুনে। মানুষের ভিতরের বিষ সেই প্রথম অনুভব করেছিলাম। আবার সে আমার কাছে কলকাতার কথা শুনতে চাইত। শহর বলতে সে বারিপদা গেছে। আমি অবাক হয়ে বারিপদার গল্প শুনতাম তার মুখে।

দুয়ারসিনি দেবীর থানের কথা শুনতাম। ছোট ভাই দণ্ডপাট মিশুকে ছিল। সে আমাকে বংশীধর ঠাকুরের কথা বলত। গাঁয়ে তাঁর ছোট মন্দির। প্রতি পূর্ণিমায় বংশীধর কৃষ্ণ বাঁশি হাতে গ্রাম পরিক্রমায় বের হন। সেই বাঁশি শুনলে, কুমারী, বিবাহিতা সকল কন্যারা ঘরের বাইরে বেরিয়ে আসে বাঁশির সুরে। পূর্ণিমায় তাই মেয়েদের সাবধানে রাখতে হয় রাতে। কোনো পূর্ণিমায় আমি শুনিনি অবশ্য বাঁশির সুর। পুরুষ বলে কি ?

ছোট ভাই দণ্ডপাট আর বলত ষাটিদহর কথা। হাতিবাড়ির সুবর্ণরেখা খুব গভীর নদী। ষাট হাত জল সেখানে। পুরাকালে এই অঞ্চলের রাজা যাবতীয় অনাচারে রুষ্ট হয়ে সুবর্ণরেখার ভিতরে নেমে গিয়েছিলেন তাঁর প্রাসাদ নিয়ে। কিন্তু রাজা তো প্রজা বৎসল ছিলেন। তাই নদীতে বান এলে, পশিমের জল নেমে এলে বন্যার হাত থেকে প্রজাদের বাঁচাতে জলের নিচে প্রাসাদে ঘন্টা বাজিয়ে দিতেন। বন্যার সময় নাকি সেই ঘন্টাধ্বনি শোনা যায়। আমার প্রথম উপন্যাস, ‘নদীর মানুষ’ এই বংশীধরপুরের পটভূমিকায় লেখা।

সেখানে হাতিবাড়ির ষাটিদহর পুরাণ-কথা ব্যবহার করেছিলাম।আমার অফিসের ডি-গ্রুপ স্টাফ ছিল ধরা যাক মুচিরাম মুরমু। সাঁওতাল জনজাতির যুবক। তার কথা না বললেই নয়। এই এলাকা কয়েক বছর আগে উপদ্রুত অঞ্চল হয়ে উঠেছিল। বড় জোতের মালিকরা বিপ্লবী যুবকদের ভয়ে পালিয়েছিলেন জামসেদপুর, ঘাটশিলা, বারিপদা। সন্তোষ রাণা এই অঞ্চলের যুবক। তিনি ছিলেন এই অঞ্চলে নক্সাল আন্দোলনের প্রধান মুখ। জনজাতিরা, সাঁওতাল, মুণ্ডারা, এই সব মানুষের কাছে ঘৃণ্য, জংলী। হ্যাঁ, দণ্ডপাটও জংলী বলত মুচিরামকে। সেই মুচিরাম কত কথা বলত সন্ধ্যায়। তখন নিজের অজান্তে নদীর মানুষ উপন্যাসের বীজ বপন হচ্ছে মনের ভিতর।

সেটেলমেন্ট ক্যাম্পের জীবন অতি বর্ণাঢ্য। বংশীধরপুরের আগে ছিলাম ডেবরা থানার করণ্ডা নামের এক গ্রামে। প্রায় এই রকম গ্রাম। কংসাবতী নদী পার হয়ে যেতে হতো। সেই ক্যাম্পের ডি গ্রুপ নিখিল প্রধান নদীর মানুষ উপন্যাসে অশ্বিনী প্রধান হয়ে এসেছিল। উপন্যাস সমগ্র ১ম খণ্ড প্রকাশিত হচ্ছে। এই নদীর মানুষ এই খণ্ডে অন্তর্ভুক্ত।

নিখিল প্রধান করণ্ডা হল্কা ক্যাম্প অফিসে গ্রীষ্মের এক সন্ধ্যায় এলেন পুরোন ময়লা সতরঞ্জি দিয়ে মোড়া কাঁথা, চাদর, তেলচিটে বালিশ নিয়ে। আর একটা বড় থলেতে লুঙ্গি, পপলিনের পাঞ্জাবি, ধুতি, গেঞ্জি আর একটি খদ্দরের চাদর। এসেছিলেন বোশেখ মাসে, এপ্রিল ১৯৭৪। প্রথম ছ-মাস আমাদের কাজ ছিল না। তারপর অঘ্রানে আরম্ভ হলো। শীত পড়েছে। মাঠে মাঠে ধান কাটার ধুম। এই সময়টা গ্রাম বাংলায় আনন্দের দিন। ঘরে ঘরে ধান ওঠে, ধান কেটে ধান ঝেড়ে, ধান কুটে গরিব মানুষের হাতে পয়সা আসে। ক’দিন বাদে নবান্ন। পৌষ সংক্রান্তির ভোরে টুসু ভাসান নদীর জলে, মেলা পার্বণ, পিঠে পায়েস। নিখিল প্রধান ক্যাম্পে এই কমাসে চারপাশ চিনে নিয়েছিলেন। গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়াতেন। যেখানে থাকতে এসেছে্ন, সেই জায়গাটা চিনে তো নেবেন।

গ্রামে বাবুবাড়ি কটা, মানে অবস্থাপন্ন চাষী, ভূমধ্যকারী পরিবার কটি, গরিব মানুষের বসতি কোন দিকে, কটি পুকুর আছে, বাগান আছে, হাট কতদূরে, ফসল কেমন হয়, এই সব খোঁজ নেন নিখিল প্রধান। গ্রামে তাঁর নিজের জমি আছে বিঘে দুইও নয়। ভিটে আছে চার কাঠার উপর। কিন্তু তাতে তাঁর সংসার চলে না। তিন ছেলে, দুই মেয়ে, সামান্য বেতন, নিখিল প্রধানের সংসারে ডানে আনলে বাঁয়ে ফুরোয়। তিনি বাড়ির খেয়ে চাকরি করতে পারেন না। সেই প্রথাই ছিল না। কম বেতনের দুঃস্থ কর্মচারীকে যত বেশি হেনস্থা করা যায়, তাতেই প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তিদের সুখ। তারা সকলেই নাকি চোর। ঘুষ খোর। ক’টাকা বেতনের চাকুরিয়া তারা? তাদের দূর অঞ্চলে পাঠিয়ে বিড়ম্বিত করে দিয়েই সুখ ছিল কর্তাব্যক্তিদের। আমি তা দেখেছি। দেখেছি আমলাতন্ত্রের নিষ্ঠুরতা।

অসৎ আমলার হম্বিতম্বি। সৎ ব্যক্তির জীবন কত বিড়ম্বিত করা যায়, তেমন ঘটনা কম দেখিনি। পাশাপাশি রুচিমান, সৎ মানুষকেও দেখেছি বড় চেয়ারে। প্রথমে যাঁকে মনে হয়েছে কঠিন, ক্রূর, পরে দেখেছি তিনিই সব চেয়ে মানবিক।

নিখিল প্রধান সারা মাস গ্রামে ঘুরে ঘুরে কটি নারকেল, কিছু আলু, এমনি নানা সব্জি সংগ্রহ করে মাস বেতনের পর বাড়ি যেতেন সেই সব নিয়ে। একটা বস্তা ভরে যেত। সেই বস্তা মাথায় করে করণ্ডা নামের গ্রাম থেকে লোয়াদা নামের গঞ্জ অবধি হাঁটা। মাইল পাঁচের উপর হবে। কাঁসাই নদী পার হয়ে বাস। নিখিল বাড়ি চললেন। এই যে সংগ্রহ, তার ভিতরে আমার দেওয়া শাড়িও ছিল একবার। বাড়িতে এসে বলতে, মা একটি নতুন, কয়েকটি পুরোন দিয়েছিলেন নিখিল প্রধানের স্ত্রীর জন্য।

নিখিলবাবু জরিপের কাজে গিয়ে আচমকা উধাও। কোনো গরিব চাষীর বাড়িতে ভাত খেতে বসেছেন। ভাত, খেসারির ডাল আর আলু সেদ্ধ অনেকটা। পিঁয়াজ আর শুকনো লঙ্কা পোড়া দিয়ে মাখা। অবস্থাপন্নরা নিখিলবাবুকে তোয়াজ করবে কেন? কোথাও ভাত পেলে অফিসের মেসে একটি মিল বাদ যায়। নিখিলবাবুর খরচ কম হয়। কখনো তিনি মাছ নিয়ে হাজির। খালে জাল ফেলেছিল একটা লোক, তার কাছে গিয়ে নিখিলবাবু বলেছেন, খাল তো সরকারি, সরকারি খালে মাছ ধরছ গোপাল, তোমার তো জেল হয়ে যাবে। বেআইনি কাজ করছ। এদেশে গরিব মানুষই আইন মানে। আইনকে ভয় করে। সেই গোপাল তখন নিখিলবাবুকে ধরে পড়ল, কী হবে ছার, আপনি বাঁচান। নিখিলবাবু তাকে বাঁচালেন, একটি বোয়াল মাছ নিয়ে। সেই মাছ অফিসের মেসে দিয়ে বললেন, দাম দশ টাকা হবেই, তাঁর দেওয়া হল মেস খরচ। গোপালকে তিনি অনুমতি দিয়েছিলেন। মাঝে মাঝে মাছ নিয়ে এসে মেসের খাতায় দশ টাকা নিজের নামে যোগ করে দিতেন।

গরিব মানুষ, এমন উঞ্ছ বৃত্তি না করলে যে তাঁর চলে না। সেই নিখিলবাবু রাতে ঘুমের ঘোরে কাঁদছেন। আমার ঘুম ভেঙে গেছে। আমি খাটে শুয়েছি, মেঝেয় মাদুর পেতে নিখিলবাবু। কান্নার কারণ তাঁর মেয়েটি। বিয়ে দিতে চান পারছেন না। অনেক টাকা চায়। কী করে দেবেন? চেয়ে চিন্তে কত আর উঠতে পারে? নিখিলবাবুর সব খবর আমাকে দিতেন আর একজন। নৈশ প্রহরী সন্তোষ। তার বয়স কম। সে নিখিলবাবুকে দাদা বলত। নিখিলবাবুর কাজ ছিল গ্রামে গ্রামে নোটিস জারি করা। নোটিস জারি করতে গিয়ে যদি ভাত জোটে। নোটিস জারির দিন তিনি মেসে বলেই যেতেন, দুপুরের মিল বাদ। ফিরে এসেছেন পায়ে হেঁটে কুড়িটি নোটিস দিয়ে, কিন্তু খাওয়া হয়নি সারাদিন। মুড়ি খাচ্ছেন নোটিস দিয়ে এসে এমনও দেখেছি। বাবুরা পাত্তাই দেয়নি সেটেলমেন্টের ‘পিয়ন’কে। নিখিলবাবু এই যে গ্রামে গ্রামে ঘুরতেন, হাত খাতায় নাম লিখে আনতেন কে ভাগে চাষ করে, কিন্তু জমির মালিকের ভয়ে বলতে পারছে না। জরিপের সময় তিনি ডাকলেন, নকুল ও নকুল, কোনো ভয় নেই, এসে বলো, কোন জমি ভাগে করো। তখন ভাগচাষী এগিয়ে এল।

কী অদ্ভুত মানুষ সেই নিখিলবাবু? যখন ক্ষমতা আর বেতনে অনেক উপরওয়ালা এসে বলেন, অমুক বাবুর জমির ভাগ চাষী ভুয়ো, ভাল করে তদন্ত করে দেখুন তো, তিনি জিপ হাঁকিয়ে চলে যেতেই নিখিলবাবু বলেন, বাবু ( আমাকে তিনি ঐ সম্বোধন করতেন) , ও সত্যিই ভাগে চাষ করে, ওর নামটা লিখে দিন। এখন মনে হয় তখন কেন প্রণাম করিনি মানুষটিকে। রাতে ঘুমের ঘোরে কাঁদছেন, দিনে ভাগ চাষী খুঁজে বেড়াচ্ছেন অন্ন সংগ্রহ করতে । আমার প্রথম উপন্যাস ‘নদীর মানুষ’ এর বড় অংশ জুড়ে নিখিলবাবু আছেন। নিখিলবাবু এবং নগেন মাইতি ( নাম পরিবর্তিত ) মশায়কে আমি ভুলতে পারব না এই জীবনে। নগেন ছিলেন পেশকার। হাতের লেখা ছিল অপূর্ব। বাংলা লেখার বয়ান ছিল চমৎকার। বাংলায় আমার ভ্রমনভাতার বিল করে দিয়ে মন কেড়েছিলেন। গল্প করতেন নিজের সেটেলমেন্ট জীবনের, কিন্তু পরে বুঝেছি সেই সব গল্পের অনেকটাই বানানো এবং মিথ্যে। এক একজন মানুষের জীবন যেন নিয়তি তাড়িত হয়, উচ্ছিন্ন জীবন কত বিপন্নতার ভিতর দিয়ে যাপিত হয় তা নগেন মাইতিকে দেখে প্রত্যয় হয়েছিল। সেই মাইতিবাবু নিরাপদ পেশকার হয়ে আছেন নদীর মানুষ উপন্যাসে। আসলে এক জায়গার অভিজ্ঞতা অন্য পটভূমিতে গিয়ে থিতু হয় উপন্যাস রচনাকালে।

@ লেখাটি লেখকের ফেসবুক থেকে নেওয়া