সালিশ ॥ দীপু মাহমুদ


বলো মরিয়ম, তোমার কথা বলো।
আজকের এই সালিশে উপস্থিত গণ্যমান্যজন। মায়ের পেটের পুতের সমান ভাই-ভগ্নিগণ। সবার তরে নিবেদন, এই অভাগিনীর কথা শোনেন, বিচার করেন দশজন। চন্দ্র সাক্ষি, সূর্য সাক্ষি আর সাক্ষি কুমার গাঙের পানি, সত্য বই মিথ্যা নয়, রসুল সাক্ষি মানি।

এই গাঁয়ের কিশোরী মরিয়মকে স্মরণে আনেন সকলে। কটুবাক্য বলে নাই সে একটাও কোনো দিন কারও সনে। বাপের জন্যে মাঠে ভাত নিয়ে যেত সে রোজ। ফেরার পথে মাঠ ছাড়িয়ে আইল পেরিয়ে নামত এসে বিলে। শালুক তুলে কোচড় ভরে, নটে শাকের ডগা ছিড়ে সেই মরিয়ম ফিরত ঘরের পথে।
কুমার গাঙে বান ডাকল যখন, বানের স্রোতের পানার মতন ভাসতে ভাসতে পথ হারাল চৈ। সাঁঝের বেলা গাঙের পাড়ে মারিয়ম ডাকত জোরে- আয় আয় চৈ চৈ, চৈ চৈ চৈ-।
আসল কথা বলো, মরিয়ম।
জয়নাল ছিল খেলার সাথি। গানের গলায় ওস্তাদ মানে তাকে, জানেন সকলে। কই কোনো দিন তো বুঝি নাই সে মর্ম। ভেতরে কী আছে তার। আচানক বান ডাকল গাঙে। পথ হারাল চৈ। জয়নালের গানের টানে উচাটন হলো মন। বুকের মধ্যে মোচড় দিলো বাতাস। গলায় এসে আটকে গেল দম। কি ছিল সেই গানে! কে জানে। কে জানে তার সন্ধান। দিশা পাই না, দিশা পায় না এ মন।

বাতাবি লেবু টইটম্বুর রসে। গাছের থেকে নুয়ে পড়ে নিচে। রাস্তা দিয়ে গান গেয়ে যায় সে। ঘূর্ণিটানে বাতাস ওঠে নেচে। কুমার গাঙে বান ডেকেছে ওই।
দোষ নেবেন না দশজনে। যৌবতী এক কন্যা এসে দাঁড়ায় পথের ধারে। পাকা ধানে শালিক এসে উঠোন ভরে যায়। সেদিকে খেয়াল নাই কন্যার, হায়! অভাগির চক্ষু পথের পানে। মিথ্যা যদি বলি তবে জিব আমার আটকে য্যানো যায়। লেবু গাছের আড়াল ছিল, আড়াল থেকে দেখেছি তাকে, সামনে আসি নাই। মরিয়ম দেখে- ওই জয়নাল যায়।

জয়নালের গানই তবে সর্বনাশের মূল। কথা কি জয়নালের কিছু আছে?
ঘর ছাড়া এক বনের মানুষ আমি। গানটাকে ধর্ম বলেই জানি। জন্মে শুনেছি এই গান। কণ্ঠে ধরেছি তাকে। তাঁতি যেমন লাল সবুজের সুতোয় গামছা বোনে, তেমনি যতনে বুনেছি। লালন করেছি, পালন করেছি। আপন খেয়ালে ছড়ায়ে দিয়েছি তাকে।
গান গেয়ে তুমি ঘর থেকে টেনে বের করেছ মরিয়মকে।
বনের পাখি আপন খেয়ালে গান গায়। কে তাতে উদাসী হয়, কে না হয়, সে দোষ পাখির ঘাড়ে কেন বর্তায়?
বনের যে পাখি সেও গান গেয়ে আকর্ষণ করতে চায় তার সাথিকে। যেমন করেছ তুমি।
চৈত্রের দুপুরে যখন বিরান মাঠের মাঝে ঘুঘু ডেকে যায়, কাকে সে আকর্ষণ করতে চায়, বলেন সকলে। তারও আগে জানেন দশজনে, মরিয়ম কি ভালোবেসেছিল আমাকেই, নাকি আমার গানকে? সে কী বলতে চায়!
তাকে না তার গানকে ভালোবেসেছি ঠিক জানা নাই। গানটাকে ভাবতে গিয়ে ভাবনায় এসেছে মানুষটা। মানুষ ছাড়া গান, লাঙ্গল ছাড়া ফাল মনে হয় য্যান। গানটাকে ভালোবেসেছি না মানুষটাকে! মানুষটাকে, না ওই মানুষের গানটাকে?
সত্য বলি উপস্থিত গণ্যমান্যজন। এক বাপের জন্ম মোর, মাতা একজন। ফুল থেকে পাপড়ি ছিঁড়ে ভাবি নাই কোনো দিন, ফুলটাকে ভালোবেসেছি নাকি ফুলের পাপড়ি সকল।

বড়ো মাঠের ওপাশে বাড়ি। কাসেম যার নাম। বিবাহ হয়েছিল তার সাথে মরিয়ম তোমার।

একদিন সাঁঝের পর মায়ে ডেগি মুরগি ধরে। বড় আদরে পেলেছিলাম তাকে। বাপজান বটি হাতে আসে জবো করব বলে। কান্দন ছাড়া আর কি গতি ছিল সেইদিন আমার কন।
মশলা দিয়ে মায়ে ঝাল গোস্তো রান্ধে। বাপজান ঘর বার করে কয়েকবার। আমার খৈ ফোটা মায়ের মুখে হঠাৎ আষাঢ়ের মেঘ জমে। চুপচাপ কাজ সারে। নিজ হাতে পানি তুলে গোসল করায়। যেমন করাত ছোট্টবেলায়। জবাকুসুম তেল মাখায়। বাকসো থেকে বের করে নিজের একখানা শাড়ি পরায় সেই রাতে।

নিশিতে লোক আসে পাঁচজন। আধো আলো আধো আঁধার। লণ্ঠনের আলোয় মুখের ঠাওর পাওয়া দুষ্কর। তার মধ্যে একজন হবে আমার বর। গঞ্জে দোকান আছে একখান। মনোহারী কারবার। ফসলি জমি, নিজের বাড়ি। হাতিশালে হাতি, ঘোড়াশালে ঘোড়া। টাকশালে টঙ্কার পাহাড়। রাজপুত্তুর আসে পক্সিক্ষরাজে চড়ে ঠকা ঠক ঠক ঠক ঠক ঠক ঠক।

বাপজান কেঁদেছিল খুব। আমাকে জড়িয়ে ধরে বলেছিল, খুব ভালো ঘর। রাণী করে রাখবে তোকে। গলা আটকে গিয়েছিল কান্নায়। কথা শেষ করতে পারেনি বাপজান।
তাকে আমি রাণী করেই রাখতে চেয়েছিলাম। এই অভাজনের নাম কাসেম। গঞ্জে দোকান আছে একখান। মনোহারী কারবার। আলতা, সাবান কিংবা গন্ধ তেলের অভাব হয়নি কখনো মরিয়মের। ভাত কাপড়ের অভাব এই বাড়িতে বংশ পরম্পরায় নাই জানেন সকলে।

তবুও কিসের জানি অভাব ছিল তার। খোলসা করে কোনোদিন সে বলে নাই আমায়। আমিও ঘাঁটি নাই। একান্ত কোনো কথা যদি মনে থাকে, থাক গোপনে।
জয়নালের কথা কিছু শুনেছিলাম বটে। আমল দিই নাই। কাঞ্চা বয়স। ওরকম বাতাস লাগেই গায়। কিংবা ভেবেছিলাম, কুলগাছ থাকলে লোকে তো ঝাঁকি দেয় তাতে। কুল খাওয়ার বাসনা হয়েছিল বলে কে কবে গান ধরেছিল তার হিসাব করলে কি কারবারির চলে।

মরিয়মের মনের তলদেশ ছুঁতে পারিনি কখনো। অতল গভীর থেকে টেনে তুলি তাকে কি সাধ্য মোর। এক মনোহারী কারবারি আমি। নিতান্ত মামুলি একজন।
ভেবেছিলাম সব সময়ের সাথি হিসেবে সন্তান পেলে বুঝি কেটে যাবে তার বালিকাসুলভ এই মনোভাব। সন্তানও হলো একজন। দিনেদিনে বড়ো হলো সেও। মনে যা ভেবেছিলাম বাস্তবেও দেখা গেল তাই। ব্যস্ত রইল মরিয়ম বেশ কিছুদিন সন্তান পালনে।

সন্তান হবে বলে সে এসেছিল বাড়ি। ফিরে গেল। আবার এলো। আবার গেল। যতবার বাড়ি থেকে ফিরে যায় ততবার অস্থির থাকে সে। আপন মনে ডুবে থাকে। মরিয়মের অস্থিরতা তাকে দিনে দিনে দূরে টেনে নিয়ে যায় কোথায় কে জানে!

ঘনঘন বাড়ি আসতে চাইত। ঘর শূন্য করে সে যখন চলে আসত, আমারও ক্ষতি হতো অনেক। তবুও তার মুখের পানে চেয়ে বাধা দিই নাই কখনো। কখনো হয়তো বলেছি, না গেলেই কি নয়!
বৌ আমার রাগ করে ভাত খায়নি। চোখের পানিতে গাল ভিজিয়েছে। বৌকে আমি রাণী করে রাখতে চেয়েছি। এতটুকু কষ্ট তাকে স্পর্শ করে আমি চাইনি। চলে এসেছে মরিয়ম ঘর শূন্য করে।
শেষবার যখন ফিরে গেল বৌ, বড়ই সুখ পেয়েছিলাম মনে। আনন্দ উচ্ছ্বল বৌটাকে আমার মনে হলো বসন্ত পেরিয়ে গাছের নতুন পাতা। সজীব সুন্দর প্রাণোচ্ছ্বল। বিকেল বেলা এক পশলা বৃষ্টির পর হালকা নরম রোদ ছড়িয়ে পড়েছে বৌয়ের রূপে। বৌ আমার পান খায়। ঘর আলো করে ঘুরে বেড়ায়।
বুঝি নাই। বুঝি নাই উপস্থিত গণ্যমান্যজন। মনোহারী কারবারি আমি। হিসেব শক্ত থাকে মোর। প্রতিদিন খাতা মেলাই, ক্যাশ গুণি। গুণে গুণে সাতটা তালা লাগাই রোজ। বুঝি নাই জ্বলে ওঠা রূপের নিচে এত কষ্ট মোর।

কদিন মাত্র যায়। বৌ আমার একান্তে একদিন অতি সঙ্গোপনে কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিসিয়ে কয়। শোনা যায় কি না যায়। কথাগুলো স্পষ্ট নয়, ছাড়া ছাড়া। তবুও বাজের শব্দ মনে হয়। মাথার ভেতর বিজলি চমক খায়।

বৌ বলে যায়, ছাড়ান দেন মোরে। মুক্তি দেন। বনের পাখিকে উড়ায়ে দেন। জয়নাল কথা দিয়েছে, বৌ করে নিয়ে যাবে সংসারে। বোঝার চেষ্টা করেন, চাতক যেমন পানির ন্যে আকাশের পানে চায়, খালের পানি যেমন নদীর দিকে ধায়। তেমনি এই মন কেবল বন্ধ খাঁচায় আঁচড়ায়, খামচায়, নিজের মধ্যে ছটফটায়। নিজ হাতে খিল খুলে দেন তার। মুক্তি দেন তাকে। ছাড়ান দেন। ছাড়ান দেন আমায়।
চন্দনের বাসনা সাবান যদি হতো, কিংবা গন্ধ তেল, আতর, চুলের ক্লিপ, তাও বুঝি নিজের করে রাখা যায়। মানুষের মনকে বান্ধি কিসে। কি দিয়ে আটকাই। নিজের করে রাখি কেমনে, কি মন্ত্র কিছুই জানা নাই।

মুক্তি দিলাম। মুক্তি দিলাম তাকে আমি। বড় ভালোবেসে তার সুখের লাগি ছাড়ান দিলাম তাকে। বুকের ভেতর শুধু গুমরায় মোচড়ায়। আমারই ঘরের বৌ যায় অন্য ঘরে। হে পরওয়ারদেগার! তার অন্তরে ফুল ফুটুক আমার কষ্টের আগুনে।

তবে সত্য কথা কই, বিশ্বাস যান সকলে। বড় ভালো মেয়ে মরিয়ম। সরল, বড়ই উদার মনের। তাকে আমি বড্ড বেশি ভালোবেসে ফেলেছিলাম। বেসেছিলাম কেন বলি মান্যজন, এখনো তাকে আমি ভালোবাসি আগেরই মতন।
সমস্যা তো নাই তাইলে। মরিয়ম এখন যাও জয়নালের ঘরে।
সমস্যা সেইখানেই। জয়নাল অস্বীকার যায় সব। স্বামীর বাড়ি থেকে যখন ফিরি, রাস্তার ওপরে তখনই জয়নালকে দেখি। কলে পানি আনতে যাই। জয়নাল সেখানেও রয়। নদীতে যাই। জয়নাল বসে থাকে ঠায়। নিঃসংকোচে কয়, একই কথা বার বার করে কয়, মরিয়ম আমি তোর জন্যে বসে রই।

বিয়ান বেলা জয়নালের গান শোনা যায়। সাঁঝের বেলা জয়নালের গান শোনা যায়। কুমার গাঙে বান ডেকে যায় ফের। বানের স্রোতে পানার মতোই ভাসতে থাকে মন। শক্ত করে বেঁধে রাখি তাকে। সুরের টানে বাঁধন খুলে যায়।

থাবার মধ্যে আটকে পড়া পাখির মতো ছটফটাই। বলি, এ কী করেন। কী করেন আপনি মোর। শরীর অসাড় হয়ে আসে। নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়। জয়নাল তার অতিপ্রিয় সব গান একান্তে আমাকে শোনায়। সুর তোলে এই শরীরে, নাচন লাগায়।

ক্ষেতের ফসলের ওপর বয়ে যাওয়া বাতাসের মতোন ঢেউ তুলে দেয় মনে। গান যে বাঁধে, যন্ত্রের হাতও তার নিপুণ। সে জানে কোন তারে কোন সুর। টুং করে বেজে ওঠে। ছড়িয়ে পড়ে সেই সুর পুরো শরীরে আমার।

পোড়া এই শরীর তবে তাকে টেনেছিল বুঝি। কী আছে এই শরীরে? কী মাহাত্ম! কুমার গাঙের পানি স্থির যখন, স্বচ্ছ ততোধিক। তখন দেখেছি এই শরীর। মাজাঘসা স্বাস্থ্যবতী এক নারী।

সেই কবে ছোটকালে, স্মরণে আসে খুব ক্ষীণ। মাঠ পেরিয়ে পথের ধারে এক সাহেব ডেকে বলেছিল, দাঁড়াও খানিক। ফটোক তুলি একখান। সাহেবের কথা যতদূর মনে পড়ে বলেছিল য্যানো কোনো এক কবির পদ্যের নায়িকার মতোন নাকি চেহারা আমার। ভাবি নাই কোনোদিন, সত্যই কি তাই!

শরীর সে তো সুরের আধার। আমি শিল্পী মানুষ। সংগীত আমার জ্ঞান। মরিয়মের শরীরটাকে দেখেছি গাঙের নাহাল। সদা চঞ্চল। বেহালার ছড়ে টান দিয়েছি যতবার, মরিয়মের শরীর হতে পেয়েছি নতুন গীতের সন্ধান। সমুদ্দুরের তল হতে ডুবুরি যেমন মুক্তো তুলে আনে, তেমনি এক অপার সঙ্গীত তালাশ করেছি তার দেহে।

আজকের এই সালিশে উপস্থিত গণ্যমান্যজন, ভাই-ভগ্নি বন্ধু সকল। বিচার করেন। বিবেককে শুধান, সে কী কয়। দোষ যদি হয়ে থাকে কিছু, অপরাধ যদি হয়, তবে জানি বলবেন সকলে, তা সঙ্গীতের হয়েছে নিশ্চয়।
সঙ্গীতকে মাফ করে দেন। দোহায় মুরুব্বিজন। এমন কোনো সাজার হুকুম য্যানো না পাই, যাতে গীতের কিছু অসম্মান হয়। শরীরের কষ্ট মানা যায়। দুই বেলা অন্ন বিনে বাঁচা যায়। কিন্তু সংগীত যখন ধুলায় লুটায়, শতেক অপমানে জর্জরিত হয়, তখন দম বন্ধ হয়ে যায়। বুকের মধ্যে কলজে শুকিয়ে যায়, ছটফটায়। বিশ্বাস করেন, খুব কষ্টের মৃত্যু তখন শিথানে দাঁড়ায়।

স্বপ্ন দেখিয়েছে জয়নাল আমায় সংসার গড়ার। গানের যে আকুতি, সেই আকুতি নিয়ে সে টেনেছে আমায় তার পানে। বারেবারে। গানের ভেতরের সবটুকু ব্যথায় সে আমায় জর্জরিত করেছে। বুক শূন্য করে তখন বেরিয়ে এসেছে হাহাকারের বাতাস। আমি তার জন্যে অস্থির হয়ে থেকেছি, নিত্য ছটফট করেছি। আটকে রাখতে না পেরে তার কাছে মনের কপাট খুলে ধরেছি।

সে আমায় বাঁধবে ভেবেছিলাম। ভেবেছিলাম সে আমায় তার গীত বানায়ে রাখবে। তার নাওয়ে সওয়ারী হব বলে নিজের নাও ভাসায়ে দিয়েছি। পাড়ে এসে দেখি রঙিন পাল তুলে নাও তার ভেসে গেছে দূর কোন পথে। কোন দিগন্তে তার সন্ধান কে বা জানে!

ভুল বুঝেছিল মরিয়ম। সে ছিল গানের তাগিদ আমার। আকাশটাকে ডেকেছি কত, ছুঁতে পারিনি। দিগন্তকে কি ছোঁয়া যায় কন সকলে! দিগন্তে ছড়ায়ে দিয়েছি তারে। দিবানিশি স্বপ্নে ভেবেছি। স্বপ্ন বুনে চলেছি সেই তাঁতির মতোন। তাকে নিয়ে গান বেঁধেছি আমি। গান বেঁধেছি কত, ‘অচিন গাঁয়ের অচিন মেয়ে, দুঃখ কোরো না। আকাশ থেকে চন্দ্র কভু খসে পড়ে না।’
বলেন কী করে তাকে আমি পাতালে নামাই? চন্দ্র হয়ে থাকুক। আসমানের তুলো ভরা মেঘ, ঝকঝকা নীল, সিঁদুরে পশ্চিম কিংবা বুনো ফুলের ঝাঁঝ হয়ে থাকুক সে আমার।

খুব সকালে নেওর যেমন ঘাসের ওপর জ্বলে, নাকফুল বলে ভ্রম হয় তাকে। থাক, সে ঝিকমিক করুক। নিজের হাতে তুলতে গিয়ে সে তার সৌন্দর্য হারায়। পাছে ঘাসের ডগা, ধানের শীষ ম্লান হয়ে যায়।
সত্য, সত্য বলি মুরুব্বিজন। মরিয়ম ঘর চেয়েছিল। চতুর্বেড়ার বেষ্টনী যেমন। আপনারাই কন, শক্তি কী মাটির দেয়াল, টিনের চালের, আটকায় সুরের টংকার। গানের যে আধার, বলেন ভগ্নি সকল, সে যদি প্রাচীন দৈত্য হতো, না হয় আটকে দিতাম পিতলের কলসির ভেতর।

উপস্থিত গণ্যমান্যজন, বনের পাখিকে উচিৎ কি বলেন খাঁচায় আটকান? দশজনে শুনতে চেয়েছেন আমার জবান। শোনেন দিয়ে মন। ডেরায় বদ্ধ মনের কপাট সকল, জ্যান্ত নয়, সে সব মৃতের সমান। মুক্ত মানুষকে তাই শেকল পরাতে ভয়। পাছে ঘিরে ধরে আঁধার তাকে, মনের হয় বা পরাজয়।

মরিয়মের আকুল আবেদন
বিচার করেন, আপনারা বিচার করেন মুরুব্বিজন। বৈশাখী ঝড় যেমন উড়ায়ে নেয় সকল। চৈত্রের আগুনে পুড়ে সব খাক হয় যেমন। তেমনই বিরান করেছে এ জীবন, ঘর ছাড়া করেছে আমাকে ভালোবাসার ঝড়ের মাতম। বিচার করেন, মরিয়মের ভালোবাসার বিচার করেন সালিশে উপস্থিত গণ্যমান্যজন।