উপদ্রুত ঘাসের ভেতর ॥ নুসরাত সুলতানা


সাইফ বরকতুল্লাহর লেখা বিভিন্ন সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পড়েছি।এই লেখকের লেখার কোমল প্রকাশভঙ্গী, ভদ্রোচিত শব্দচয়ন আমাকে মুগ্ধ করে।বইমেলা (২০২২) থেকে সংগ্রহ করি গল্পের বই ‘উপদ্রুত ঘাসের ভেতর’।

বইটিতে গল্প আছে মোট দশটি। গল্পগুলো হলো ‘উপদ্রুত ঘাসের ভেতর’, ‘দুঃখ প্রাইভেট লিমিটেড’,‘কতদিন সন্ধ্যার অন্ধকারে’, ‘লকডাউনের সন্ধ্যাগুলো’,‘কোয়ারেন্টাইন’,‘বিমর্ষ সন্ধ্যা’, ‘তবে কী তোমার প্রেমেতে পড়েছি’,‘ রানী’, ‘মানুষের মধ্যে’ এবং ‘নেই কেউ নেই’।

উপদ্রুত ঘাসের ভেতর: এই গল্পে লেখক সজীব চরিত্রটির নাগরিক জীবনের মানসিক অস্থিরতা, প্রযুক্তির আগ্রাসন, হারিয়ে যাওয়া মধুর শৈশব স্মৃতি আমাদের হারানো সংস্কৃতি সবকিছু নিবিড়ভাবে তুলে এনেছেন।সবশেষে নির্ঘুম রাতে সজীব আওড়ে চলে শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা ‘এখন গভীরভাবে ঘাসের ভিতরে বসে/থাকা, ভালো মনে হয় এই প্রগাঢ় রোদ্দুরে’।

দুঃখ প্রাইভেট লিমিটেড: এই গল্প করোনাকালের বিমূর্ত চিত্রকল্প।এই গল্পে উঠে এসেছে স্বজন হারানোর বেদনা, অর্থ সংকট এবং জীবনের সাথে কম্প্রোমাইজের নিবিড় আবহ।

কতদিন সন্ধ্যার অন্ধকারে: একাকীত্ব আর নিঃসঙ্গতার হাহাকারের নকশীকাঁথা এই গল্প।রানু একা থাকে এই ব্যস্ত শহরে।শাওন তারচেয়ে বয়সে কিছুটা ছোট।ভালো লাগে শাওনকে রানুর।শাওনের কথা মনে হলে চোখের কোন ভিজে ওঠে। সন্ধ্যার সাথে সাথেই বিষণ্নতা ভর করে রানুর দেহ-মনে।তিন বছর আগে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা মনে পড়ে যায়।শাওনও একা।তিন বছর হলো মাকে হারিয়েছে।মা মারা যাওয়ার পর ক্ষিদে পেলেও খাবার তাড়া দেওয়ার কেউ নেই। কিন্তু রানু আর শাওনের ভালো লাগা ভালোবাসা হয়ে ধরা দেয় না।বিষণ্ন শহরে প্রেম বুঝি কেবলই পরাভূত হয়।

লকডাউনের সন্ধ্যাগুলো: এই গল্পে লকডাউনের সময়ের বিভিন্ন সংকট উঠে এসেছে।যানবহনের সংকট, নিম্ন আয়ের মানুষদের অস্তিত্বের সংকট।অনলাইন অফিসের ক্ষেত্রে নেটওয়ার্ক ঝামেলা ইত্যাদি সবকিছু সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন লেখক।
কোয়ারেন্টাইন: এই গল্প করোনাকালীন মানুষের বন্দীদশার নিগুঢ় চিত্রায়ন। মহামারির ভয়াল গ্রাস থেকে মানুষ কিভাবে সেল্ফ মোটিভেশনের মাধ্যমে নিজেকে উত্তরণ করেছে তারও চমৎকার আলোকপাত আছে এই গল্পে।

বিমর্ষ সন্ধ্যা: এই গল্পটিও কোভিড-১৯ মহামারিরই গল্প।আমরা অনেক বিখ্যাত মানুষদের হারিয়েছি।প্রবাসীদের দেশে ফিরে কোয়ারেন্টাইন করার হ্যাপা।করোনার ভেতরেই আঘাত হেনেছিল ঘূর্ণিঝড় আম্ফান। সময়কে ধারণ করেই বেড়ে উঠছে গল্পের শরীর।

তবে কী তোমার প্রেমেতে পড়েছি: ইভান আর উসার অনুরাগের মিষ্টি গল্প।প্রেমে পড়ার মুহূর্তে মানুষ নিজের অনুভূতিতেই নিজে মুগ্ধ থাকে। নিমজ্জনের বার্তা বহন করে গল্পটি।

রানী: মাসউদ আর রানী দুজন দুজনকে পছন্দ করে।বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ায় তারা।বসন্তদিনে যায় গোলাপ গ্রাম।দুজনেরই প্রেমের আকাঙ্খা আছে।কিন্তু সংকোচ ভেঙে কেউই প্রকাশিত হয় না।এরই ভেতর মাল্টিন্যাশিনাল কোম্পানির চাকরি নিয়ে মাসউদের বিদেশ যাবার সময় ঘনিয়ে আসে।জড়িয়ে ধরে চোখের জলে দুজন দুজনকে বিদায় জানায়।

মানুষের মধ্যে এবং নেই কেউ নেই চমৎকার দুটি গদ্য।এই দুটি গদ্যে লেখক মানুষের নগর জীবনের দৈনন্দিন জীবন সংগ্রাম, বিষণ্নতা, একাকীত্ব এবং মনস্তত্ত্বকে চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।

পরিশেষে বলব, সাইফ বরকতুল্লাহর গদ্যের প্রকাশভঙ্গীতে নতুনত্ব আছে। তবে এরপর কাহিনির বিস্তার, আরও সঘন গদ্যের গল্প চাই এই লেখকের কাছ থেকে।