আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরীর ছোটগল্প (পর্ব-৩) ॥ রকিবুল হাসান


‘কুমকুম’ গল্পে আমরা দেখি, গল্পটির নায়িকা কুমকুম তার পাড়া-মহল্লায় সবার সঙ্গে স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠলেও সবার থেকে সে আলাদা, কথাবার্তায় চালচলনে স্বাধীনচেতা স্বভাবের।পাড়া-মহল্লায় সে দুমুর্খ বলে পরিচিত, আবার তার রূপের খ্যাতিও যথেষ্ট।তার সাহস,স্পষ্টবাদিতাকে পাড়ার বখাটে-মাস্তান ছেলেরা ভয় পায়।আবার প্রেমেও সে নিঃসঙ্কোচ, স্পষ্টবাদী।

‘কুমকুম’ গল্পে নারীদের সমাজের শেকল ভেঙে নিজস্ব অধিকার বোধে সচেতনতা এবং প্রেম-ভালোবাসা প্রকাশে দ্বিধাহীন নিসঙ্কোচ সাহসিক একটি চিত্র আমরা পাই।সময়ের প্রেক্ষিতে যা একটি সাহসী উচ্চারণ হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।আমরা এখনো দেখি নারীরা নানাভাবে অপমানিত হচ্ছেন, নির্যাতিত হচ্ছেন, এমনকি আত্মহননের পথও বেছে নিচ্ছেন।এ সময়ের প্রেক্ষাপটেও কুমকুম বাঙালি নির্যাতিত নারী সমাজের প্রতিবাদী এক চরিত্রই শুধু নয়, প্রতিনিধিও।

পাড়ার খারাপ ছেলেদের দলপতি রাজ্জাক।মহল্লায় মেয়েদের নিয়ে আজব টাইপের অদ্ভুত সব মিথ্যে ও নোংরা গল্প তৈরি করে বন্ধুদের বাহবা কুড়ায় সে।একদিন কুমকুমকেও প্রেমের প্রস্তাব দেয় বন্ধুর মাধ্যমে একটা চিঠি পাঠিয়ে।কুমকুম সেই চিঠি পেয়ে সরাসরি রাজ্জাকের সামনে এসে তীর্যকমিশ্রিত ভঙ্গিতে প্রতিবাদ করে।

বাকপটু বখাটে রাজ্জাক তখন বোকা বনে যায়।ব্যারণ কোম্পানির বড় সাহেবের বউ রাজিয়া বানু কুমকুমকে বেশ স্নেহ করেন।কুমকুম তার কাছ থেকে প্রায়ই গল্পের বই নিয়ে পড়ে।রাজিয়া বানুর কাছে কুমকুমের এরকম ছোটখাটো উপদ্রব নিয়মিত হয়ে উঠলেও তাকে স্নেহ করেন। তার বাড়িতেই একদিন কুমকুমের সঙ্গে দেখা হয় আমিন চৌধুরীর। আমিন চৌধুরী রাজিয়া বানুর খালাতো ভাই।এই আমিন চৌধুরীকে নিয়ে রসকিতা করতেও ছাড়ে না সে।একদিন আমিন চৌধুরী ঝড়ের কবলে পড়ে মাথা ফাটিয়ে ব্যাণ্ডেজ বেঁধে বাসায় ফেরে।মাথায় ব্যান্ডেজ বাঁধা দেখে তার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ে কুমকুম।তার সেবায় প্রেমে কুমকুম গভীরভাবে মগ্ন হয়ে পড়ে সে।আমিনকে জড়িয়ে তার নামে পাড়ায় বিভিন্নরকম খারাপ কথা তৈরি হয়।রাজিয়া বানুর কানেও একদিন সে কথা পৌঁছে যায়।তিনি এসব কথাকে মিথ্যে এবং যারা এসব অপপ্রচার করছে তাদের মনকেই ‘ছোট’ বলে কুমকুমের কাছে আপন মনে নিজের অভিমত ব্যক্ত করেন- ‘ছি ছি, লোকগুলোর মন কি ছোট, কি মিথ্যে সন্দেহ ওদের?’

কুমকুম এ সময় রাজিয়া বানুর কথায় বাধা দিয়ে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয় আমিন আর তাকে নিয়ে লোকে যা বলাবলি করছে তা মিথ্যে নয়। রাজিয়া বানু নিজেও এতে বিস্মিত হন।এরপর আমরা দেখতে পাই, ‘চার পা এগিয়ে, দু’পা পিছিয়ে’ আমিন যখন হাঁটছে তখন কুমকুম এই দৃশ্য পরখ করে দ্রুত এগিয়ে তার কাছে যায়।তখন পার্কের কোণে ‘রাস্তার লোক’ রাজ্জাক এবং তার সঙ্গীরা জটলা পাকিয়ে আড্ডা দিচ্ছে।এসবের কোনো কিছু তোয়াক্কা না করে সমস্ত দ্বিধাকে জয় করে সে আমিনকে হাত ধরতে বলে।আমিন তার হাত ধরতে সাহস করে না।কুমকুম তখন তাকে রীতিমতো ধমকাশ্রিত ভঙ্গিতে বলে, ‘আমার হাত ধর’। তখন কুমকুমের দিকে হাতটা বাড়িয়ে দেয় আমিন।এরপর তারা এগুতে থাকে।

কুমকুম এ সমাজের সাহসী নারী মুখ।জীর্ণতা ভেঙে, গতানুগতিকতাকে চূর্ণ-বিচুর্ণ করে, সামাজিক সংকীর্ণতা দুপায়ে মাড়িয়ে এই সমাজের বুকেই প্রেমে-সাহসে মাথা উঁচু করে দাঁড়ায় সঙ্কোচ-দ্বিধাকে পিষে, নিজের অধিকার-ভালোবাসায় তখন উজ্জ্বল এক নারী স্মারক হয়ে ওঠে সে। আর এখানেই একজন কুমকুম সাধারণ থেকে অসাধারণ ও অনন্য হয়ে উঠেছে।কুমকুম যেভাবে নষ্ট সমাজচক্ষুর মাঝে দাঁড়িয়ে দৃঢ়তার সঙ্গে আমিনের হাত ধরে তা এই সমাজের অবরুদ্ধতা ভেঙে নারীকে খোলস ভেঙে বেরিয়ে আসার একটি সাহসী উচ্চারণ হিসেবেই বিবেচনা করা যায়। ফলে এটি চমৎকার একটি প্রেমের গল্প হয়েও ব্যাপক অর্থে ভিন্ন ব্যঞ্জনা ও গুরুত্ব বহন করে।

গল্পকারের সযত্ম সৃষ্ট মনস্তাত্ত্বিক একটি গল্প ‘রুচিরা’।গল্পটিতে পাশাপাশি ফ্ল্যাট বসবাসরত দুটি পরিবারের পারস্পরিক সম্পর্ক, ব্যক্তিগত নানান বিষয় বিশেষ করে তাদের রুচিশীলতার বিষয়টি মনস্তাত্ত্বিক ভঙ্গিতে উপস্থাপিত হয়েছে।ইঞ্জিনিয়ার খালেদ আর বাংলার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ক্লাসের ছাত্রী ফরিদা নতুন দম্পতি।বাহ্যিকভাবে তারা অত্যন্ত সুখী একটি পরিবার।চালচলন, কথাবার্তায়, সাজগোজ সর্বক্ষেত্রে ফরিদার মধ্যে একটি রুচিশীলতা কাজ করে।এমনকি গান পছন্দের ক্ষেত্রেও।এ গল্পের গুরুত্বপূর্ণ একটি চরিত্র ‘উত্তমপুরুষ’ এবং তার স্ত্রী এ দুজনের কাছেও মনে হয়েছে আসলেই ওদের ‘সুখ হিংসে করার মত’।

উত্তমপুরুষ ব্যক্তির সঙ্গে ফরিদার রবীন্দ্রসংগীত পছন্দের একটি ভারি মিলের দাবি সে কারণেই।সামান্য সময়ের ব্যবধানে সে দাবি অর্থহীন হয়ে যায়। উত্তমপুরুষ ব্যক্তিটি ‘রেকর্ড প্লেয়ারের ডালা খুলে সুইচ অন করে’ ‘কেন যামিনী না যেতে জাগালে না সখি, বেলা হল মরি লাজে’ গানটি বাজাতেই ফরিদা ‘অদ্ভুত ত্রাসে’ উঠে দাঁড়ান।প্রায় চিৎকার করে বলেন ‘থামান, থামান এ গান থামান… ছি ছি কি রুচি আপনার।’

ফরিদার এ ধরনের আচরণ তার স্বামী খালেদের কাছে ‘বাড়াবাড়ি’ হিসেবে বিবেচিত।যা উত্তমপুরুষ চরিত্রের কাছে বিস্ময়ের বিষয়।এরপর গল্পটি এগিয়েছে মনস্তাত্ত্বিকতায়।খালেদ সাহেব স্ত্রীর ব্যবহারের জন্য বারবার বিনীত ভঙ্গিতে ক্ষমা চেয়ে কথা বলাকে একটা মানসিক সমস্যা হিসেবে ভেবেছেন উত্তমপুরুষ।মানসিক ও শারীরিক অতৃপ্তিতে ভোগা খালেদ সাহেব সামাজিকভাবে নিজেকে একজন সুস্থ মানুষ মনে করেন। তার কথাবার্তা আচার-আচরণ তার মানসিক অসুস্থতা এবং একান্ত ব্যক্তিগত সমস্যাগুলোর প্রকাশ ঘটতে থাকে।ফরিদা বিয়ে করেও চুমু না খেয়ে, শারীরিকভাবে মিলিত না হয়েও স্বামীকে ভালোবাসতে চায়। শারীরিক সম্পর্ক তার কাছে অশ্লীল ও বিরক্ত মনে হয়।স্বাভাবিক ও অপরিহার্য এই বিষয়টি খালেদ বহুবার বহুভাবে চেষ্টা করেও স্ত্রীকে বোঝাতে ব্যর্থ হয়ে একরাতে তাকে জোর করে নিজেই নিজের স্ত্রীর শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে।ফরিদা তখন ঘর থেকে ছুটে বের হয়ে পাশের ফ্ল্যাটে যায় এবং উত্তমপুরুষের স্ত্রীর সঙ্গে রাত্রিযাপন করে।এ বিষয়টি নিয়ে উত্তমপুরুষ এবং তার স্ত্রী দুজনে রীতিমতো দুশ্চিন্তাগ্রস্ত।পরের দিন তাদের কাছে বিষয়টি স্পষ্ট হয় খালেদের কথাতেই।

ফরিদার রুচি আর শ্লীলতাবোধের বাই মাঝে মাঝে বাড়াবাড়িতে পৌঁছে। তখন স্বামী-স্ত্রী সম্পর্কটাকেও সে অশ্লীল ভেবে ঘৃণা করে।
খালেদ বিভিন্নভাবে ফরিদাকে অনুগত করার, স্বামী-স্ত্রীর স্বাভাবিক শারীরিক সম্পর্ককে বোঝানোর চেষ্টা করেছে।ঘরে ছোট ছোট দোলনা পর্যন্ত এনেছে- যদি এতে সন্তানের আশা জাগে, চিকিৎসকদের শরণাপন্ন হয়েছে, কিন্তু কোন কিছুতেই সফল হননি তিনি।সে কারণে স্ত্রীকে জোর করে পাবার একটা প্রবণতা তৈরি হয় তার মধ্যে এবং তার প্রয়োগও ঘটে। ‘এ ধরনের কর্মকাণ্ডের ফল ভালো হয় না’ এরকম ধারণা পোষণ করেন উত্তমপুরুষ চরিত্রটি।স্ত্রীকেও এ বিষয়ে নিজস্ব ধারণার কথাটি বলেছেন তিনি।কিন্তু অবাক হওয়ার মতো ঘটনা এই জবরদস্তির ঘটনা খালেদ ও ফরিদার মধ্যে পরের রাতেও ঘটে।উত্তমপুরুষ দম্পতি এ ঘটনা বুঝতে পেরে দরজার কাছে এগিয়ে যান।কিন্তু দরজার বাইরে তালা লাগানো দেখে রীতিমতো বিরক্ত ও ক্ষুব্ধ হয়ে দরজার একেবারে কাছ থেকে ফিরে আসেন নিজেদের ফ্ল্যাটে।এরপর অফিসের জরুরি কাজে উত্তমপুরুষ মফস্বল শহরে যান।সাতদিন পর উত্তমপুরুষ লোকটি ফিরতেই নিজের ঘরে ‘কেন যামিনী… মরি লাজে’ গানটি বাজতে শুনে অবাক হন।এরপর রীতিমতো বিস্মিত হলেন যখন শুনলেন গানটি ফরিদার পছন্দে বাজছে।ফরিদার দিকে চোখ ফিরে এ যেন এক অন্য ফরিদাকে তিনি দেখেন-কপালে কুমকুমের জ্বলজ্বলে ফোটা, ঠোঁটে গাঢ় রং আর কাঁধকাটা ব্লাউজের বাইরে সুডৌল ফর্সা দুটি নিটোল বাহু।ফরিদার রূপ যেন রাতারাতি বেড়ে গেছে।

এ গল্পে নারী চরিত্রের রহস্যময় জটিল একটি দিক তুলে ধরা হয়েছে। ভালোবেসে বিয়ে করে শারীরিক সম্পর্ককে যে নারী স্থূলতা মনে করেছে, যে গান তার কাছে অশ্লীল মনে হয়েছে, শত চেষ্টা-কৌশল-চিকিৎসা তাকে স্বামীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনকে স্বাভাবিক ভাবাতে পারেনি- সেই নারীই আবার অনাকাঙ্খিত ও অনভিপ্রেত ঘটনার মধ্য দিয়ে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনে স্বাভাবিক হয়ে ওঠে, রুচির ধরন বদলায়, চেহারা-সুরতে ফুটে ওঠে তৃপ্ততার আভা।নারী চরিত্রে এক জটিল দিক এখানে আবিষ্কৃত হয়েছে।সে সঙ্গে পাশাপাশি ফ্ল্যাটে বসবাসরত দুটি পরিবারের সামাজিক, আত্মিক ও মনস্তাত্ত্বিক একাত্মা হৃয়দবন্ধন তৈরির বিষয়টিও গল্পটির বিষয়বস্তুতে শুধু চমকপ্রদতাই তৈরি করে না- তাৎপর্যতাও বহন করে। আর এ গল্পের মানব-মানবীর জৈবিক প্রবৃত্তি চিরন্তন এই সত্য বিষয়টি ভিন্ন আঙ্গিকে উপস্থাপিত হয়েছে।প্রকৃতিগত এই চিরন্তন সত্যটিকে জোর করে অস্বীকার করা যায় না- জীবনের সিঁড়িতে সহজাত আদিম এই প্রবৃত্তি কখনো না কখনো জড়িয়ে যাবেই। আর এটিও সুন্দরেরই এক অনবদ্য রূপ।এই সুন্দরতাই মন-শরীরে বিকশিত হয়ে ওঠে তৃপ্ততার আলো রূপে।মনস্তাত্ত্বিক শৈল্পিকতায় এই জটিল বিষয়বস্তু ‘রুচিরা’ গল্পে চিহ্নিত হয়েছে।

‘চেহারা’ গল্পে সমাজের ক্ষত তুলে ধরার চেষ্টা লক্ষ্য করা যায়।সুদর্শনা নারী সমাজে কোনো কালেই যে নিরাপদ নয়- পদে পদে তাদের জন্য বিপদ যে ওত্ পেতে থাকে এবং একটি মাত্র অনাকাঙ্খিত ঘটনা জীবনকে কিভাবে বদলে দিতে পারে- কিভাবে আশা-আকাঙ্খা, স্বপ্ন-সৌধ ভেঙে চুরমার হয়ে যেতে পারে, কিভাবে পারিবারিক সম্মান-খ্যাতিতে আকস্মিক বজ্রাঘাতের মত কলঙ্ককালিমা লেপন হয়ে সমাজজীবনে কতটা বিব্রত অবস্থা সৃষ্টি করে- এসবই আলোচ্য গল্পে মূল উপজীব্য। আশরাফ খানের সুন্দরী মেয়ে সানু।একদিন তারা পারিবারিক কাজে বাইরে বেড়াতে যান।সানু প্রকৃতির নির্মলতায় মনের ডানা মেলে ঘুরে সন্ধ্যায় একা রিকশায় বাসায় ফিরছিল।তাকে একা পেয়ে একদল ছেলে জোর করে তুলে নিয়ে যায়।ছেলেগুলো কর্তৃক সানুর শ্লীলতাহানি ঘটে।এরপর থেকেই সানু অসুস্থ।পারিবারিক সম্মান নষ্ট হওয়ার ভয়ে আশরাফ খান এই ঘটনাটি নিজেদের ফ্যামিলি ফিজিশিয়ান ছাড়া অন্য কাউকে জানাননি।দীর্ঘদিনেও সানু সুস্থতা লাভ না করায় আশরাফ খান মনো-চিকিৎসাবিদ ডা. মঈনউদ্দীন চৌধুরীর শরণাপন্ন হন।তিনি আশরাফ খানের আন্তরিক মিনতিতে সুদূর ময়মনসিংহে যেয়ে চিকিৎসা করতে সম্মত হন। ডা. মঈনউদ্দীন চৌধুরীরর চিকিৎসায় সানু সুস্থ হয়ে ওঠে।

আশরাফ খান সানুর শ্লীলতাহানির ঘটনাটি গোপন করে একরকম তাড়াহুড়ো করে দ্রুতই তাকে পাত্রস্থ করার সিদ্ধান্ত নেন।এমএ পাস পাত্র পেয়ে তার সম্পর্কে বিস্তারিত না জেনেই শুধু শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে মেয়েকে পাত্রস্থ করেন।বিবাহ সম্পন্ন হওয়ার পর বর-কনেকে পর্দায় ঘিরে আয়নায় পরস্পরের মুখ দর্শনের সময় সানু বরের মুখ দেখামাত্রই ভয়ে চিৎকার করে জ্ঞান হারায়।সুবেশি সুশিক্ষিত চেহারা, ভদ্র-মার্জিত, চোখেমুখে বুদ্ধির ছাপসম্পন্ন এই শিক্ষিত বর স্বরূপ পুরুষটির বাহ্যিক চেহারার আড়ালে যে তার আর একটি ভয়াবহ অন্ধকার দিক আছে- যে অন্ধকারের ভয়াল থাবার শিকার সানু নিজেই।তার মুখ আয়নায় দর্শন করা মাত্রই অতীতের ভয়ঙ্কর ঘটনাটি তার মনে পড়ে এবং সে চিৎকার দিয়ে আবার অসুস্থ হয়ে পড়ে।ডা. চৌধুরীরর চেষ্টায় স্বল্পসময়ে সে আবার সুস্থ হয়ে ওঠে।গল্পটিতে একজন মেয়ের সুন্দর চেহারা যেমন তার বিপদের জন্য সহায়ক, তেমনি আর একশ্রেণির পুরুষ আছে যারা বাইরে ভদ্র-মার্জিত শিক্ষিত, ভেতরে নারীলোভী।সমাজচক্ষুকে ফাঁকি দিয়ে নৈতিক স্খলিত এ ধরনের পুরুষেরা সমাজে সভ্য ও ভদ্রতার লেবাস পরে অসংখ্য ও অমার্জনীয় ক্ষত তৈরি করে- লেখক খুব দক্ষতার সঙ্গে সমাজের ভয়াবহ এসব ‘চেহারা’ তুলে ধরতে পেরেছেন। ‘চেহারা’ গল্পে মূলত সমাজের কালোদিকগুলোই শৈল্পিকভঙ্গিতে উপস্থাপিত হয়েছে।