ঘনঘোর বরিষায় ॥ দিলারা মেসবাহ


ষড়ঋতুর নব নব খেলায় বিভোর বাংলা।আর বর্ষা মৌসুম সহসা বিদায় নিতেই চায় না।মৌরুসিপাট্টা! আকাশ ভরা মেঘেদের নৃত্যের ছল, গুরুগুরু গুরুতর সুরবাহার! মাঝে মাঝে বজ্র বিদ্যুতের তীব্র কটাক্ষ।কবিগুরুর প্রিয় ঋতু। কবি গেয়ে ওঠেন আত্মমগ্ন,
‘এমন দিনে তারে বলা যায়/এমন ঘনঘোর বরিষায়’।
গেরস্থ আড়ালে মুখিয়ে ওঠে,কী বলা যায়! ‘সমাজ
সংসার মিছে সব/ মিছে এ জীবনের কলরব।’
হায় কবির মন কি নাগাল পায় আমজনতা!..।

স্মৃতি কথা লিখতে যখন কলম ধরেছি,তখন বাঘা বয়ান দিয়ে শানেনুজুল হোক।গরম ভাতে পয়লা প্রথম তিতা দিয়ে বিসমিল্লাহ করা স্বাস্থ্য সম্মত? তখনএই ভেল্কিবাজির শহর,যাদুর শহর ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশন রোডে পুরনো ভিটেয় বাস।যৌথ পরিবার।দিনরাত ঘর গেরস্থালির বিবিধ বিচিত্র টানাপোড়েনের বা অল্প সল্প মায়া মহব্বতের কিচিরমিচির। তার ওপর হাঁড়ি পাতিল কড়াই খুন্তির রণসঙ্গীত। কারো অহেতুক ঠাটবাট! এর মধ্যে ‘ঝরঝর মুখর বাদল দিন’।

খুচরো আলাপে বিলাপে সরব গৃহকোণ। এই ‘তরঙ্গ ভঙ্গে’ ঠ্যালা ধাক্কায় বা বিনা ধাক্কায় দিন কাটে মহাব্যস্ততায়। রাত নামে। শান্তি নাহিরে।ওই যে ঝমাঝম বৃষ্টির তোড়। আকাশ মরা কান্নায় বেহুঁশ। পাঁচ ইঞ্চি পাকা দেয়াল, উপরে টিন।টেম্পোরারি ঠাঁই। আর একপাশে লম্বা টিনশেড। লাগাতার শিশুদের সর্দি,কাশি,জ্বর। দিনের বেলা যেমন তেমন রাত নামে বিভীষিকার ছদ্মবেশে। ঝমাঝম বৃস্টির নেয়ামত, টিনের চালের কোন বেহুলার বাসরের ফুটো দিয়ে ঝরতে থাকে! চোখে মুখে টপাটপ। আসমানী শরবত। তড়িঘড়ি জলধারা পতনের ছিদ্র শনাক্ত করে ছোট গামলা পেতে দেই। এদিক সেদিক সবদিক গভীর অভিনিবেশসহ পর্যবেক্ষণ করি।পূবে হাঁড়ি পেতে দিতে হয়। পশ্চিমে মগ।বাচ্চা জেগে যায়। ব্যাপক কান্নাজুড়ে দেয়। কাঁধে পিঠে করে ভিজে ঘরে হাঁটাহাঁটি। আল্লাহকে ডাকি, পাঞ্জেরি প্রভাত হবার আর কয় প্রহর।গায়েবি আওয়াজ শুনি, বান্দা তিষ্ঠ ক্ষণকাল। হায় সুবহে সাদেক! কখন উচ্চারণ করা যায়, ‘আজি এ প্রভাতে রবির কর/ কেমনে পশিল প্রাণের পর।’

অতঃপর ভোর হয়।কাক,পাকপাখালির কিচিরমিচির অমৃতসমান। আহা ওই দেখা যায় একফালি রোদ।বারান্দায় কুতকুত খেলছে। গ্রিলের ফাঁক দিয়ে ঢুকে।

কর্মদিবস শুরু!…রান্না বাড়া,অফিস আদালত ইত্যাদি কর্তা পাক্কা ঈমানদার বান্দা। তিনি এক কার্যকরি পদক্ষেপ নিলেন।পরিবারের সুখসাচ্ছন্দ্যের জন্যে কত না চিন্তিত। সরাসরি পাকঘরে। সেও বহরে প্রস্থে নেহায়েত খর্বাকৃতির। সে যাক। আরে সবই তো টেম্পোরারি। যাহোক হাতল ভাঙা কড়াই বসলো কেরোসিনের চুলায়। তাতে পড়লো, না-গাওয়া ঘৃত নয়। ঘন কুচকুচে কালো বর্ণ আল- কা-ত-রা, একদলা
আলকাতরা। আমার দায়িত্ব এই কুৎসিত দর্শন পদার্থটুকু জ্বাল দিয়ে ফুটাতে হবে। মনকে মুহূর্তে কানপড়া দিয়ে চাঙা করে তুলি।জগতের প্রতিটি অভিজ্ঞতায় নিহিত থাকে পরমার্থ! হে বোকা মন বুঝদার হও। আখেরে ফল পাবে।ঝাপ্পড় ফুড়ে পড়বে, ধৈর্যশীলদের সাথে আল্লাহ থাকে।দৃশ্যপট একটু বদলে যায়। ফুটন্ত আলকাতরার ছিটেফোঁটা হাতের চামড়ায় লেপ্টে যায়। মনকে বুঝ দিতেই থাকি।

বলি, ছিঃ এতটুকুতে ভেঙে পড়লে চলে। হ্যাভ কারেজ। এবার কানা ভাঙা কড়াই নিয়ে ভদ্রলোক মালকোচা মেরে ধাই ধাই উঠে গেলেন টিনের চালে। আলকাতরার পলেস্তরায় ওই সকল বজ্জাতমার্কা ফুটোগুলো আচ্ছামতো বুঝি জন্মে মতো, সদর্পে জব্দ করলেন।আমি চেয়ে চেয়ে দেখি।হ্যাঁ বুয়েট ফেরতা, ম্যাট্রিকে সেই সময়ের পূর্ব পাকিস্তানের মেধাতালিকায় নাম লেখা প্রকৌশলী তিনি। নেমে এলেন বীরদর্পে। পরিবারের সুখ বলে কথা। বাহবা দিতে হয়। দিবাগত রাত! গভীর ঘুমে রাত কাটবে।কী সুখ।

কী আনন্দ! হায় বিধি বাম।সেই ঝমাঝম বর্ষণ।অমনি লোটা মগইত্যাদি দিয়ে আসমানী শরবত সংরক্ষণ। গোস্বায় মন বিগড়ে যায়। আসলে গরু মার্কা টিনও যদি দিত,তবু কিছুটা রক্ষা হোত।ঠিক ঠি কই হয়তো কোন ঢালের দোকান থেকে বান্দর মার্কা টিন কিনছে! এসবই টেম্পোরারি? এখানে একদা সাতমহলা প্রাসাদ উঠবে। সত্যি বহুতল ভবন উঠেছে বটে।কিন্তু আমার সেই স্বর্ণ সময় লুটপাট হয়ে গেছে তো।সাতটি তুমুল বর্ষা এবং হাঁচি কাশি শিশুদের দুর্ভোগ ‘ভুলি কেমনে? বেদনা সনে আজও যে মনে রহিল আঁকা’..।

তিতা শরীর স্বাস্থ্যের জন্যে হিতকর।তিত পর্ব শেষ করি।তবে তামাম শোধ কী? ফিরে যাই ফুটন্ত শৈশবে। শৈশবে কৈশোরে বৃষ্টির টাপুরটুপুর খুব প্রিয় ছিলো। স্কুলে ‘রেইনি ডে’ ঘোষিত হলে পোয়া বারো। সারাদিন ভাই বোনের সাথে টুকটাক খুনসুটি। তবে দুরন্তপনায় ভাইবোনদের মধ্যে কোনদিন চাম্পিয়ন হই নি।পর্যায়ক্রমে ওরা চাম্পিয়ন হতো।এবং পুরষ্কার স্বরূপ রাশভারি বাবার কড়া বকুনি।তবে মারধরের ইতিহাস ছিল না। হালকা চড়চাপড় ইত্যাদি ছিলো।

বৃষ্টিমোড়া দিনে খিচুড়ি মুরগি ভুনা,গরু কষানো অথবা ইলিশ ভাজা চলতো।সাথে মায়ের হাতের স্পেশাল কাশ্মিরী আচার। ডিম ভাজা গব্য ঘৃত সহকারে হতো পাকঘরে। পাবনায়, লাকড়ির চুলায়।

শৈশবের অনেকটা কেটেছে জন্মভিটা শামিম মঞ্জিলের উঁচু প্রাচীর ঘেরা বাড়িতে। সেখানে অতিমাত্রায় স্নেহ ভালোবাসা আদরে দিনরাত মাঝে মাঝে বড় পরাধীন মনে হতো। কথা হচ্ছিল বাদল দিন নিয়ে। বৃষ্টিতে ভেজার তেমন খায়েশ ছিলো না,থাকলেও উপায় ছিলো না। জোড়া জোড়া চোখের পাহারা ছিলো। জ্বর জ্বালা হলে কী হবে! সন্তানহারার শোক ছিলো মা-বাবার বুকে যে।

বৃষ্টির অপরূপ রূপ দেখেছি যখন আমরা রাজশাহী ছিলাম। জানালার চওড়া তাকটুকুর দখল নিয়ে দুই বোনে কোন্দল হতো।একবার আব্বা ছাতার বাট দিয়ে হালকা বাড়ি দিয়েছিলেন। চরম অপমানিত বোধ জন্মেছিল। ওই জানালার দুই তিন কদম দূরে ছিলো একটি জল ছলছল দীঘি।ওটা একটা বায়োস্কোপ বটে।টাপুরটুপুর জলের ফোঁটা টুপ করে দীঘিতে পরেই মিশে যেতো। ছোট ছোট গোল গোল জলখেলা দেখতাম।

ক্লাস ফাইভে পড়ি তখন।কী অপূর্ব সে দৃশ্য। উঠোনে গোপালভোগ আম গাছ ছিলো। ঝড়ের মাতামাতিতে আম পড়তো উঠোনে। যে দৌড়ে কুড়াতে পারতো সেই দিগ্বিজয়ী। ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টিতেও হেতেম খা মহল্লার ছেলে বুড়ো অনেকেই দীঘিতে কাপড় কাচত, গামছা দিয়ে গা রগড়ে রগড়ে বিপুল বিক্রমে স্নান করতো।সাবানের ফেনা বুদবুদও দেখা যেত! পাড়ার রকবাজ বকাটে ছেলে দীঘির পাড়ে ভিজতে ভিজতে গাইতো, ‘হায় আপনা দিল তু আওয়ারা,না জানে কিসিপে আয়েগা..।’

গরমের লম্বা ছুটিতে আমরা নানাবাড়ি উল্লাপাড়া যেতাম,এটা আমাদের শৈশব, কৈশোরের অলিখিত বিধান ছিলো যেন। ট্রেনের প্রায় পুরোটা ইন্টার বগিতে আমাদের সাময়িক সংসার! হুইসেল বাজিয়ে ট্রেন ছুটে চলেছে।.. চারপাশের সবুজ ধানের শীষ,গেরস্থ বাড়ির উঠোন,দোদুল্যমান লাউডগা সব যাবতীয় আমাদের সাথে পাল্লা দিয়ে ছুটতো। কোনবার জানালার কাচের ওপারে ঝমাঝম বৃষ্টির ঢল।কী চমৎকার! সেই সব দৃশ্যপট।মা খুলে বসতেন ঢাউস টিফিন ক্যারিয়ার।তাতে যা সযত্নে সাজানো থাকতো তার সবই যেন অমৃত।পরোটা বা রুটি আলুভাজি সুজির মোহনভোগ আর অবধারিত মুরগি ভুনা।সুঘ্রাণে ইন্টার বগি চলন্ত ভোজনঘর হয়ে উঠতো। কোন বর্ষার মৌসুমে রেল স্টেশনে থামতো।

অমনি আধভেজা ‘চা গ্রাম’ ওয়ালা উঠে পড়তো বগিতে। হালকা ভেজা গাল ভাঙা লোকটা সুর করে ঘুরতো এ মাথা থেকে ওমাথা,সহজ নমাজ শিক্ষা,কাসাসোল আম্বিয়া, মরণের আগে ও পরে,নেয়ামুল কোরান ডেকে ডেকে গলা বসে যেত লোকটার। তখন বড্ড মায়া হতো।মায়া হতো ওই
ছেলেটির জন্যে, ওর কালো রোগা শরীর বেয়ে গড়াতো বৃষ্টির পানি।চিনেবাদামের ডালা সাজিয়ে করুণ মুখে ছেলেটি মৃদুস্বরে বলতো, ‘এই বাদাম, বাদাম বাদাম।’

ওর গলায় বুঝি শক্তি ছিলো না।অনেকেই বাদাম কিনতো।আমিও কিনতাম।একফোঁটা আলো কি ঝিলিক দিতো ওর ঘোলাটে চোখের মণিতে। এমন বৃষ্টি ভেজা দিনে ওরা আধপেটা থাকে।বাদাম বেচা টাকায় পরিবারের সবার পেটে ভাত জোটে না। আকাশে এলোকেশী মেঘ দেখে ওরা খুশি হতে পারে না। আমি বুঝতে পারতাম বেশ।

বর্ষা মৌসুম কবিগুরুর ভারী পছন্দের মৌসুম। যাপিত জীবনের কোন কোন পর্যায়ে আমারও ঘুম ঘুম আলস্যে মাখামাখি, খিচুড়ি বেগুন ভাজার অন্য রকম অনুভবের। তারপরেও অনেক কিন্তু কিন্তু থেকেই যায় তো সুজন বন্ধু। আসছি খানিক পরে। তো সেই যে রেলগাড়ির ঝিকঝিক দোদুল্যমানতা, বুকের অতল থেকে, মায়া বাঁশি হুইসেলের অলৌকিক আনন্দ, মেঘবৃষ্টির ঝাপটা-সবটুকু ফ্রকের কোচরেজড়িয়ে নামতাম খান মঞ্জিলে।

নানার বাঁধা টমটম, রাধাবল্লভের টমটম। ছুটছে বাদামি ঘোড়া, মৃদু চাবুক দুলায় কোচোয়ান, রাধাবল্লভ। আমরা কী এক অমল ধবল আনন্দ আবেশে কিছুটা ছটফট করছি। পথের দুধারে ভাঁটফুল, দাদমর্দন,শিয়ালকাঁটার ঝোপঝাড়। কী আপন,কী সজীব! বৃষ্টিজলে নেয়ে আরো ঝলমলে।

দূরে বটগাছে পাকা বটফল। বায়োস্কোপ-কী চমেৎকার দেখা গেল। ওই পূবে খালি গায়ে ছোট্ট মেয়েটি কালো কুচকুচে ছাগলের বাচ্চা বুকের কাছে
জাপটে ধরে অপলক টমটম দেখছে। মাতামহের দরদালানে আমরা হুল্লোড় করে চওড়া সিঁড়ি ভাঙি। জানালার খড়খড়ি টেনে বৃষ্টির ধোঁয়া ধোঁয়া উড়নি উড়তে দেখি। খানার টেবিলে বিস্তর আয়োজন। কোনটা রেখে কোনটা খাই।খোলা বারান্দার বাঁশের চিক চকচক করে বৃষ্টি জলে।

রাত ঘন হয়ে আসে। মঞ্জিলের ডানদিকে একটা চওড়া ঢাল-অনেকখানি দীর্ঘ। বর্ষা মৌসুমে ওই খাল ভরে যায় ইষৎ ঘোলা পানিতে। রাতের বেলা ডুবুডুবু খাল থেকে ভেসে আসে ব্যাঙের লাগাতার কোরাস।ওই কৈশোরে আমার ত্রিভুবন জেগে উঠতো। ‘বিশ্ব যখন নিদ্রা মগন/ গগন অন্ধকার/কে দেয় আমার বীনার তারে এমন ঝঙ্কার।’

আশ্চর্য এক অচিন আনন্দে আমি একাকার মিশে যেতাম সেই বয়সে। ভাওয়া, কুনো,সোনা ব্যাঙ, গেছো ব্যাঙ,ঘাস ব্যাঙ। আরো কতো জাতের ব্যাঙ না জানি আছে! ভাবতে ভাবতে ঘুম পালায়। আবার লাগাতার ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ!.. ওদের সুরবাহারে নেমে আসে অঢেল মেঘভরা জলের বিনীত উপহার। ঘুমাতে ইচ্ছে হয় না। বিশ্ব তখন নিদ্রা মগন! আমি নাহয় রবিঠাকুরের পায়ের কাছে বসে এমন সঘন রাতে ধ্যানমগ্ন হতে চেষ্টা করে যাই। নালার জলে ব্যাঙের উৎসব, আকাশ বলছে মেঘ পরীদের, যাও যেখানে খরা, যেখানে ফটিক জলের হুতাশন সেখানে সজল করে দাও। কার্পণ্য কোরো না। ব্যাঙ রাজকুমারের কথা ভাবতে ভাবতে কখন যেন ঘুমিয়ে পড়ি! ভোরবেলা গাছগাছালির ধোপদুরস্ত পাতায় পাতায় আলোর নাচন।

একবার বর্ষায় নালা খাল ভাসিয়ে বানের পানি চওড়া রাস্তায় থৈথৈ। কী আনন্দ। কাগজের নৌকা বানিয়েছি অনেক। উঠোনের জমা পানিতে ভাসিয়েছি কৈশোরের সেই মন পবনের নাও।হয়তো মনে মনে গুঁজে দিয়েছি সোনার বৈঠা! আহা মধুর ছোটবেলা আমার।

একসময় রংপুরে ছিলাম।মনে পড়ে সেই সব ঘন বর্ষার লাগাতার বৃষ্টিময় দিনের সাতকাহন। যদি একটিবার আকাশ জুড়ে জমাট বাধা কালো মেঘেরডাক, সদম্ভ পায়চারি শুরু হলো তো কমপক্ষে সাত থেকে দশ দিন মাতম চলবে। বাংলো থেকে দৃশ্যমান জলফুল, সে এক অনবদ্য আয়োজন। মেহগনি থেকে লনের কাঁঠালিচাঁপা নুয়ে পড়তো। ওদিকে দীঘিটির বুকে থৈ থৈ উপচে পড়া বৃষ্টি ফুল। ‘উচাটন মন ঘরে রয় না’– তখন এক আঁজলা রোদ্দুর প্রার্থনার ধন।

যাপিত জীবনে বর্ষা মৌসুম এসেছে বহুরূপে বহুদিন।একথা বলা ক্লিশে শোনাবে হয়তোবা গ্রাম গঞ্জে ঘনবর্ষা নিয়ে আসে মঙ্গা। ধানের গোলায় কয়েক মুঠো চিটা ধানও পাওয়া দুষ্কর। নৌকা ছাড়া গতি নেই। কলার ভেলা উঠোনে। মানপাতার ছাতা হয় বর্ষাতি! এসব আমাদেরই পূর্বপুরুষের ভিটেমাটি। শহরের পাকা ভবনে বসে টিভি পর্দায় ভেসে ওঠে এইসব দৃশ্যপট!… আহারে আহারে..আমাদের মৃদু মাতম কফির নান্দনিক ধোঁয়ায় মিশে যায়।কত কত নদীর পাড় ভাঙে। বসতভিটে প্রমত্ত নদীর গ্রাসে বিলীন হয়ে যায়। আমাদের পূর্বপূরুষদের বিশাল আমবাগানসহ ভিটেমাটি একরাতের মধ্যে যমুনার করাল গ্রাসে বিলীন হয়ে গেছে। ঘুমিয়ে আছে চরের পলির শিথানে চৌহালী থানার কাউলিয়া গ্রাম।

চাঁদপুরের বাংলো, তুমুল বর্ষণ।চৌকিদার মাঝে মধ্যে লাঠির শব্দ দিয়ে জানান দিচ্ছে সে ডিউটি করছে। নানীমা এসেছেন বেড়াতে। তিনি বারান্দার নেটের দরজা খুলে চৌকিদারকে আশ্রয় দিলেন। সকালে দেখা গেল বিশাল এক গুইসাপ মওকা পেয়ে ঢুকে পড়েছে। কখন জানিনা তিনি বেডরুমের স্টিলের আলমারির তলায় ঢুকে পড়েছেন।গুইসাপটিকে ওখান থেকে বের করতে রক্তারক্তি কাণ্ড। কিছুতেই তিনি যাবেন না, ন্যায্য অধিকার থেকে কেন তাকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। তবুও তো এই বর্ষা মৌসুমে দগ্ধ মৃত্তিকা শীতল হয়।

বনে বা বাগিচায় ফোটে কদম ফুল।ফোটে বেলী,জুঁই,দোলনচাঁপার দল।শুভ্র ফুলের আভাস মেলে, যেহেতু সূর্যের সাথে দেখা হয় কম,তাই ওরা শুভ্র সমুজ্জ্বল। বর্ষা মৌসুম আনে রোমাঞ্চ,সুখ দুঃখের বারোয়ারী, মৃত্তিকার সোঁদা গন্ধ। রেখে যায় পলি,নতুন আশা।