শহরটা নতুন করে আবারও দেখি ॥ জাহীদ ইকবাল


বিশ্বজুড়ে চলছে কোভিড-১৯ এর দ্বিতীয় ঢেউ। নতুন রোগী শনাক্তের হার বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি সমানতালে বেড়ে চলেছে মৃত্যুর সংখ্যা।স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে ইতোমধ্যে দশ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। করোনায় বদলে গেছে বিশ্ব। বদলেছে মানুষের জীবনযাপন। শিল্প-সংস্কৃতিতেও এর প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে। এ নিয়ে যোগসূত্রের এ আয়োজন। এবারের সাক্ষাৎকার পর্বে পড়ুন গল্পকার জাহীদ ইকবালের লেখালেখি নিয়ে।

যোগসূত্র: লকডাউনে কী পড়ছেন, কী লিখছেন?
জাহীদ ইকবাল: লেখালেখির পাশাপাশি এ বছর কিছু পুরাতন পড়া বই নতুন করে আবারও পড়েছি। তার মধ্যে আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের খোয়াবনামা, চিলেকোঠার সেপাই, খোয়ারি, শহীদুল জহিরের নির্বাচিত গল্প, হরিপদ দত্তের মহাজের, শাহীন আখতারের তালাশ, হাসান আজিজুল হকের নির্বাচিত গল্প, মাহমুদুল হকের কালো বরফ, খেলাঘর, প্রতিদিন একটি রুমাল, সুমন্ত আসলামের তবুও একদিন, সাদাত হোসাইনের মেঘেদের দিন, মাইনুল এইচ সিরাজীর আদমসুরাত, মোজাফফর হোসেনের গল্পের বই মানুষের মাংসের রেস্তোরাঁ। এছাড়াও তরুণ কিছু লেখকের বই পড়েছি।

অতিমারির এই মানবিক-বিপর্যয়ের ভিতরে বলা যায় দু-হাতে লিখছি। গত বছরের মার্চ-এপ্রিল থেকে এ বছর মার্চ-এপ্রিল পর্যন্ত প্রচুর লেখালেখি করেছি। ৩টি উপন্যাস লিখে প্রায় শেষ করে এনেছি। উপন্যাস লেখার ফাঁকফোকরে বেশকিছু কবিতা ও ৩০টির মতো ছোটোগল্প লিখেছি। গল্পগুলো থেকে বই করার জন্য ২০টির মতো গল্প বাছাই করেছিলাম। কিন্তু বইমেলা হবে কি হবে না-এই দোটানায় ভুগে শেষতক আর বই করা হয়ে ওঠেনি। দেশ পাবলিকেশন্স একুশে বইমেলা ২০২০ আমার ষষ্ঠ উপন্যাস ‘বাইশ খান্দান’ প্রকাশ করেছিল। বইটি নিয়ে আমি বেশ আশাবাদী। এই বইটি লিখতে প্রায় ১৪ বছর সময় নিয়েছি।

যোগসূত্র: কীভাবে কাটাচ্ছেন লকডাউনের দিনগুলো?
জাহীদ ইকবাল: না, লকডাউনের কারণে কোনো কাজকর্ম, ব্যবসা-বাণিজ্য একদমই করতে পারছি না। মার্কেট বন্ধ। দোকানপাট খুলতে পারছি না। তবে সারাক্ষণ ঘরের মধ্যে বন্দীও থাকা যাচ্ছে না। তাই মাঝেমধ্যে বাড়ির ছাদে এসে দাঁড়াই। চেনাজানা ঝিম মেরে থাকা শহরটা নতুন করে আবারও দেখি। ফুলগাছে পানি দিই। শহরের রোডগুলো ভেঙেচুরে একাকার। রাত-দিন খোড়াখুড়ির কাজ চলছে। মানুষের যে কী ভয়ঙ্কর ভোগান্তি তা বলে বোঝানো যাবে না। অনেক আগেই নিম্নবৃত্ত মানুষগুলোর ঘরের খাবার ফুরিয়েছে। নিম্নমধ্যবৃত্ত শ্রেণিরও একই হাল। সমস্ত দেশে মৃত্যুর মিছিল আর ক্ষুধার হাহাকার শুনতে পাচ্ছি। শহরে টুকটাক প্রাইভেটকার চলছে। তবে সমস্যা হচ্ছে রিকশাঅলাদের। আমরা দিনে দিনে অসহিষ্ণু হয়ে উঠছি। চারদিকে এত এত মানুষ মরছে তবুও যেন আমাদের বিবেকবোধ জাগ্রত হচ্ছে না। বুঝতেই পারছেন কীভাবে লকডাউনের দিন কাটছে!

যোগসূত্র: কোভিড-১৯ শিল্প-সংস্কৃতিতে কী প্রভাব ফেলছে?
জাহীদ ইকবাল: জনজীবনে এমন কোনো দিন নেই, যেখানে কোভিড-১৯ প্রভাব ফেলতে পারেনি। আমাদের সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। অনেকেই চাকরিচ্যূত হয়ে নিঃস্ব হয়ে গ্রামের পথ ধরেছে। কেউ কেউ চরম হতাশায় ভুগছেন। কোভিডের প্রভাব সবখানেই চরমভআবে বিস্তারলাভ করেছে। আমাদের শারীরিক মানসিক অর্থনৈতিক সবদিক থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

যোগসূত্র: কীভাবে করোনা থেকে উত্তরণ সম্ভব?
জাহীদ ইকবাল: করোনার কারণে সমস্ত পৃথিবী আজ অসুস্থ। করোনা যাবে না। থাকবেও না। আমাদের যেটা করণীয়-সেটা হচ্ছে সামাজিক নয় একটু শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে চলা। একটু সচেতনতা অবলম্বন করলে আমরা অনেকটা-ই ভালো থাকতে পারবো। আমরা আমাদের আত্মীয়-স্বজনদের খবর নেবো। আর্থিক স্বচ্ছলতা অনুযায়ী গরীব-অসহায়দের সাহায্য করবো। মাঝেমধ্যে ব্যায়াম করবো। পুষ্টিকর ফল খাব। তবেই আমরা ভালো থাকবো। আতঙ্কে না ভুগে ভয়কে জয় করবো। মাস্ক বাধ্যতামূলক ব্যবহার করবো এবং অন্যকে ব্যবহার করতে উৎসাহিত করব। পারলে নিজ নিজ পরিবারে ঘন ঘন হাতমুখ ধোওয়া কার্যক্রম চালু রাখব। তাহলে হয়ত করোনা থেকে আমাদের উত্তরণ সম্ভব হবে।