চেষ্টা করি বৃক্ষ-পাখি-প্রকৃতির কাছাকাছি থাকতে ॥ শাহেদ কায়েস


অলঙ্করণ: লংরিড

বিশ্বজুড়ে চলছে কোভিড-১৯ এর দ্বিতীয় ঢেউ। নতুন রোগী শনাক্তের হার বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি সমানতালে বেড়ে চলেছে মৃত্যুর সংখ্যা।স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে ইতোমধ্যে দশ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। করোনায় বদলে গেছে বিশ্ব। বদলেছে মানুষের জীবনযাপন। শিল্প-সংস্কৃতিতেও এর প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে। এ নিয়ে যোগসূত্রের এ আয়োজন। এবারের সাক্ষাৎকার পর্বে পড়ুন কবি শাহেদ কায়েসের লেখালেখি নিয়ে।

যোগসূত্র: লকডাউনে কী পড়ছেন, কী লিখছেন?
শাহেদ কায়েস: আমি মূলত কবিতাই লিখি। এই লকডাউনে বেশকিছু কবিতা লিখেছি। এছাড়া বই পড়ছি, সাধারণত একই সঙ্গে আমি কয়েকটি বই পড়ি। একটানা খুব কম বই-ই পড়া হয় আমার। এখন পড়ছি ‘হেমিংওয়ের নারীরা’, ‘তিন প্রেমিকার মায়াকোভস্কি’ এবং পাবলো নেরুদাকে নিয়ে উপন্যাস ‘দ্য পোস্টম্যান’; সেইসঙ্গে কবি শঙ্খ ঘোষ এবং কবি সিকদার আমিনুল হকের কবিতা পড়ছি।

যোগসূত্র: কীভাবে কাটাচ্ছেন লকডাউনের দিনগুলো?
শাহেদ কায়েস: লকডাউনের দিনগুলো কাটছে বই পড়ে, কবিতা লিখে আর মায়ের দেখাশুনা করে। মাঝে মধ্যে পানাম নগরীতে হাঁটতে যাই। এর মধ্যে মায়াদ্বীপে গিয়েছিলাম একদিন। পরশু জরুরি একটা কাজে ঢাকা গিয়েছিলাম। বাকি দিনগুলো সোনারগাঁয়েই আছি। আমি তো গ্রামে থাকি, গ্রামে থাকার একটা বড় সুবিধা হচ্ছে প্রকৃতির কাছাকাছি থাকা যায়। নদী, প্রকৃতি আমাকে সব সময়ই মুগ্ধ করে, চেষ্টা করি যতটা সম্ভব বৃক্ষ-পাখি-প্রাণপ্রকৃতির কাছাকাছি থাকতে। এছাড়া এবারের একুশে বইমেলা থেকে অনেক বই সংগ্রহ করেছি। তার মধ্যে কিছু পড়ছি আর বাকিগুলো ধীরে ধীরে পড়ার একটা পরিকল্পনা করছি।

যোগসূত্র: কোভিড- ১৯ শিল্প-সংস্কৃতিতে কী প্রভাব ফেলছে?
শাহেদ কায়েস: পুরো দেশজুড়েই তো মানুষের মধ্যে এক ধরনের চাপা আতঙ্ক, হতাশা, নিঃসঙ্গতা বোধের চাপ তৈরি হয়েছে। এই সময়ে সমাজে নানা ধরনের মানবিক সংকটও তৈরি হচ্ছে। বাড়িওয়ালা কর্তৃক ভাড়াটিয়া নিগৃহীত, কোথাও-কোথাও করোনা আক্রান্তদের প্রতি অসৌজন্যমূলক আচরণ, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়া, সর্বস্তরের মানুষের সরকারি কিংবা বেসরকারি হাসপাতালে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হওয়া, ত্রাণের চাল চুরি, ত্রাণের কথা বলে ধর্ষণের মতো অমানবিক ও জঘন্য ঘটনাও ঘটেছে এই করোনাকালে।। সমাজ ও রাষ্ট্রের সব ক্ষেত্রেই অর্থনৈতিক সংকট তৈরি করেছে করোনা মহামারি। শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি তো কোনো বিচ্ছিন্ন বিষয় না। এর সঙ্গে যুক্ত মানুষগুলো তো এই সমাজেরই মানুষ। কোভিড- ১৯ অন্যান্য ক্ষেত্রের মতো শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতিতেও ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে, বিশেষ করে অর্থনৈতিক ও মানবিক বিপর্যয় তৈরি করেছে।

যোগসূত্র: কীভাবে করোনা থেকে উত্তরণ সম্ভব?
শাহেদ কায়েস: কোভিড- ১৯ একটি ভাইরাস। মনে রাখতে হবে, কোনো ভাইরাসকেই পৃথিবী থেকে সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করা সম্ভব নয়। তারমানে হচ্ছে আমাদের এই ভাইরাসকে সঙ্গে নিয়েই বেঁচে থাকতে হবে। সেক্ষেত্রে আমাদের যা করা জরুরি, সেটা হচ্ছে আমাদের দেহের ইম্যিউন সিস্টেম শক্তিশালী করতে হবে, অর্থাৎ দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা করতে হবে। একই সঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে, করোনা ভ্যাকসিন সবাইকে নিতে হবে। এর পাশাপাশি মনোবল শক্ত রাখতে হবে। আরেকটি বিষয় আমি এখানে উল্লেখ করতে চাই, কোভিড-১৯-এর ফলে যে অর্থনৈতিক সংকট তৈরি হয়েছে সেটা মোকাবেলায় আমি মনে করি সরকারের অন্যান্য সাধারণ পেশাজীবী মানুষদের মতোই অস্বচ্ছল ও প্রান্তিক শিল্পীদের এককালীন একটা অনুদানের ব্যবস্থা করা উচিৎ।