যেন দুহাত দিয়ে ঠেলে ধাক্কায় সরিয়ে দিতে পারলেই বাঁচি ॥ রোকেয়া ইসলাম


বিশ্বজুড়ে চলছে কোভিড-১৯ এর দ্বিতীয় ঢেউ। নতুন রোগী শনাক্তের হার বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি সমানতালে বেড়ে চলেছে মৃত্যুর সংখ্যা।স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে ইতোমধ্যে দশ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। করোনায় বদলে গেছে বিশ্ব। বদলেছে মানুষের জীবনযাপন। শিল্প-সংস্কৃতিতেও এর প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে। এ নিয়ে যোগসূত্রের এ আয়োজন। এবারের সাক্ষাৎকার পর্বে পড়ুন নাট্যকার ও কথাসাহিত্যিক রোকেয়া ইসলামের লেখালেখি নিয়ে।

যোগসূত্র: লকডাউনে কী পড়ছেন, কী লিখছেন?
রোকেয়া ইসলাম: ২০২০ সালের বইমেলা থেকে কেনা বেশকিছু গ্রন্থ, টাঙ্গাইল সাহিত্য সংসদ আয়োজিত বাংলা কবিতা উৎসবে পশ্চিমবঙ্গ থেকে আগত কবি বন্ধুদের কাছ থেকে উপহার পাওয়া বেশকিছু গ্রন্থ, বইয়ের সংগ্রহে থাকা অপঠিত কিছু গ্রন্থ রকমারি থেকে সংগ্রহ করা গ্রন্থ এবং বইয়ের হাট, গুগল থেকে ডাউনলোড করা বইপত্র এবং মুক্তিযুদ্ধের কয়েকটি সংকলন পড়েই কাটছে এই অতিমারির দুঃসহ সময়। গল্প উপন্যাস বেশি পড়ছি। বেশকিছু কবিতা ও নতুন গল্প লিখছি।

যোগসূত্র: কীভাবে কাটাচ্ছেন লকডউনের দিনগুলো?
রোকেয়া ইসলাম: ২০২০ মার্চ থেকে শুরু হওয়া অতিমারির সময় লকডাউন তো অনেকটা সময়জুড়েই আছে।
একেবারে হঠাৎ করে পাওয়া অচেনা যাপন। ঘর-বাইর করা প্রতিটি মানুষের জন্য গলায় কাঁটা আটকে যাবার মতো যাপন। যেন দুহাত দিয়ে ঠেলে ধাক্কায় সরিয়ে দিতে পারলেই বাঁচি। চারদিকে মৃত্যু আতঙ্ক প্রিয়জন হারানোর গভীর কঠিন বেদনা। আমজনতার কর্মহীন রোজগার বন্ধ, করোনার চেয়েও ক্ষুধার মারণাস্ত্র আরও বেশি ভয়ঙ্কর এটা বুঝিয়ে দিল এই সময়টা। নতুন অভিজ্ঞতা। এর মাঝেও কাজ করতে হয়েছে যদিও ঘরে থেকেই বেশি জুম সংযোগে। সবতো আর জুম সংযোগে হয় না, সেক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করে বাইরেও যেতে হয়েছে।

পরিবারকে সময় দিচ্ছি, অসমাপ্ত কিছু লেখা সম্পন্ন করছি , ‌‌মুক্তির পঞ্চাশ গল্পে দুই প্রজন্ম নামে একটি গ্রন্থ সম্পাদনা করলাম, ভারত-বাংলাদেশ মেলবন্ধন নামের একটি কবিতা সংখ্যা সম্পাদনায় ছিলাম, ‌অপেক্ষার প্ল্যাটফর্ম দ্বিভাষিক একটি গ্রন্থ প্রকাশিত হলো আমার।

পত্র-পত্রিকায় লিখছি। বেশিরভাগই ই-ম্যাগাজিন। দেশি-বিদেশি বেশকিছু ই-ম্যাগাজিনের সাথে সংযুক্ত হতে পারছি। নিয়মিত ভার্চুয়াল আড্ডায় সংযুক্ত হচ্ছি বৃহস্পতির আড্ডায়। বিভিন্ন সংগঠনের আমন্ত্রণে লাইভ করছি, বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলছি।
আতঙ্ক দুশ্চিন্তা ভয় কাটাতে চেষ্টা করছি নানাভাবে।

যোগসূত্র: কোভিড ১৯ শিল্প সংস্কৃতিতে কী প্রভাব ফেলছে?
রোকেয়া ইসলাম: গভীরভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে। চলচ্চিত্র নির্মাণ কমে গেছে। বিজ্ঞাপন চিত্র নাটক নির্মাণসহ সব ক্ষেত্রেই প্রভাব ফেলছে। সাহিত্য অনুষ্ঠাগুলো ভার্চুয়ালি হচ্ছে তাতে দেশ-বিদেশের সাহিত্যিকরা অংশগ্রহণ করছে একটা ক্লিকেই। প্রিন্টিং মিডিয়া কিছুটা স্থবির হয়ে পড়েছে তো বটেই। তবে সবই নেতিবাচক নয় যৎসামান্য ইতিবাচক দিকও আছে। ভার্চুয়ালি সাহিত্য অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণটুকুই ইতিবাচক।

যোগসূত্র: কীভাবে করোনা থেকে উত্তরণ সম্ভব?
রোকেয়া ইসলাম: করোনা একটা মহামারি। এটা একেবারেই নতুন, তবে বিশ্বে মহামারি নতুন নয়। সামাজিক দূরত্ব বারবার হাত ধোয়া মাস্ক পরিধান করা অপ্রয়োজনে ঘর থেকে বের না হওয়া এবং ভ্যাকসিন দেওয়া কিছুটা সুরাহা দিতে পারে। তবে উত্তরণের সঠিক পথ নির্দেশ করা খুবই কঠিন। জীবন চলবে প্রয়োজনে জীবিকাও চলবে। গতিময় জীবনের প্রয়োজনে সব কিছুই চলবে তবে সব ক্ষেত্রেই সুগভীর নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। সব ধর্মের মানুষই নিজ নিজ সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করুক। যথাযথ নিয়ম মেনেই কর্মে যোগ দিক। সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করা হলে ফলাফল ইতিবাচক হতে পারে। চিকিৎসা বিজ্ঞান সফলতা পাক দ্রুত।