করোনার সঙ্গে যুদ্ধ করেই লিখতে হবে ॥ শামীম হোসেন


বিশ্বজুড়ে চলছে কোভিড-১৯ এর দ্বিতীয় ঢেউ। নতুন রোগী শনাক্তের হার বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি সমানতালে বেড়ে চলেছে মৃত্যুর সংখ্যা।স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে ইতোমধ্যে দশ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। করোনায় বদলে গেছে বিশ্ব। বদলেছে মানুষের জীবনযাপন। শিল্প-সংস্কৃতিতেও এর প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে। এ নিয়ে যােগসূত্রের এ আয়োজন। এবারের সাক্ষাৎকার পর্বে পড়ুন কবি শামীম হোসেনের লেখালেখি নিয়ে।

যোগসূত্র: লকডাউনে কী পড়ছেন, কী লিখছেন?
শামীম হোসেন: ভুবনমারির এই সময়ে মানুষ গৃহবন্দি হয়ে আছে। কারণ ভাইরাস কোনো দলমত, কবি-সাহিত্যিক চিনছে না। ফলে একটা মানসিক চাপের ভেতর দিয়ে যাচ্ছি। মন বিষণ্ন হয়ে যাচ্ছে। করোনা কেড়ে নিচ্ছে প্রিয়-মানুষদের। চিরঅন্তরালে চলে যাওয়া এই মানুষগুলো আমাকে ভাবিয়ে তুলছে। হয়তো আরো কিছুকাল তারা এই পৃথিবীর আলো-হাওয়ায় থাকতে পারতেন। তাদের কর্মসৃজনে উপকৃত হতাম আমরা। দেখুন, মৃত্যুর সারি ক্রমেই দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। এই দীর্ঘবিষাদে আনন্দ যুক্ত হচ্ছে না। ফলে পাঠের দিকে মনোযোগী হয়েছি। কিছু বই সংগ্রহ করেছি। এই তো কয়েকদিন আগে ভাষাচিত্রী জাকির তালুকদারের ‘বাছাই গল্প’ পড়ে শেষ করলাম। বেশ চমৎকার গল্পগুলো। শ্রীপান্থের ‘বিচিত্র মানবী’ ও ‘হারেম’, অংশুমান করের ‘আমি বিনয় মজুমদার’, জয় গোস্বামীর ‘প্রিয় পাঁচ কবি’, মোহাম্মদ রফিকের ‘দুটি গাথাকাব্য: এ কোন বেহুলা * সে ছিল বেদেনি’, আ-আল মামুন সম্পাদিত গৌতম ভদ্রের ‘বুদ্ধিজীবী কারে কয়’ পড়ে শেষ করেছি। এখন পড়ছি সাখাওয়াত টিপুর সম্পাদনায় ‘আহমদ ছফা: বাছাই জবাব’ ও মাহাথির মোহামাদের স্মৃতিকথা ‘এ ডক্টর ইন দ্য হাউস’। এছাড়াও বেশকিছু উপন্যাস, গল্প ও একগুচ্ছ তরুণ কবির কবিতার বই পাঠের তালিকায় আছে।

নানাবিধ সংকটের কারণে লেখা হয়ে উঠছে না। তবে এর ভেতর একটি কবিতা ও গদ্য লিখেছি। ২০২০ সালের জুলাই মাসে একটি গল্প লিখতে শুরু করেছিলাম। এখনও তা শেষ করতে পারিনি। তবে আশা করছি দু-একদিনের মধ্যেই সেটি নিয়ে বসবো। কারণ করোনার সঙ্গে যুদ্ধ করেই লিখতে হবে।

যোগসূত্র: কীভাবে কাটাচ্ছেন লকডাউনের দিনগুলো?
শামীম হোসেন: কোনো সংবাদকর্মীর কি লকডাউন আছে? যেহেতু ভাইরাস আমাদের অ্যানাকোন্ডার মতো গিলে নিচ্ছে ফলে একবেলা বাসা থেকে অপরবেলায় অফিস যেতে হচ্ছে। আগে রিকশায় বা অটোতে অফিস যেতাম এখন বাইসাইকেল চালিয়ে যাই। কয়েকদিন আগে আমাদের অফিসে একজনের করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ায় কিছুটা মানসিক চাপ টের পেয়েছি। পরে নিজের করোনা পরীক্ষা করিয়ে ফলাফল নেগেটিভ আসায় স্বস্তি পেয়েছি। এখন সাবধানে চলাচল করছি। অফিস কাজের বাইরে যতটুকু সময় পাই পরিবার ও পড়াশোনায় ব্যয় করি।

যোগসূত্র: কোভিড-১৯ শিল্প-সংস্কৃতিতে কী প্রভাব ফেলেছে?
শামীম হোসেন: পুরো পৃথিবীর মানবজাতিই একটা বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। শিল্প-কলকারখানার শ্রমিক, দিনমজুররা চরম কষ্টে আছে। যদিও সরকারের তরফ থেকে তাদের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সেই সহায়তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। উপরমহল থেকে নিচের দিকে আসতে আসতে তা কোনো কোনো ক্ষেত্রে হারিয়ে যাচ্ছে। কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কর্মী ছাঁটাই করছে। ছোটখাটো ব্যবসায়ী পথে বসেছে। ফলে মানুষ একটা ট্রমার মধ্যে আছে। এই অস্বাভাবিক পরিস্থিতি মানুষ আগে মোকাবিলা করেনি। আর শিল্প-সংস্কৃতি তো ভিন্ন কোনো গ্রহ থেকে আসেনি যে এতে প্রভাব পড়বে না। দেখুন, সম্প্রতি বইমেলা শেষ হলো। স্বাভাবিক সময়ে মেলা হলে যে পরিমাণ বিক্রি হতো এবার তা হয়নি। সংস্কৃতিপাড়া ঝিমিয়ে পড়েছে। কারণ, শিল্প-সংস্কৃতি তো মানুষের জন্য। সেই মানুষই আজ দিশেহারা। একটা অদৃশ্য জীবাণু আমাদের জীবনকে এক চির-অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। অবসাদ মানুষকে মাকড়সার জালের মতো ঘিরে ধরেছে।

যোগসূত্র: কীভাবে করোনা থেকে উত্তরণ সম্ভব?
শামীম হোসেন: এই ভাইরাসের সঙ্গে যুদ্ধ করেই মানুষকে টিকে থাকতে হবে। হঠাৎ করে কোভিড উধাও হয়ে যাবে না। গবেষকরা দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন এ থেকে উত্তরণের উপায় খুঁজতে। এখন তো টিকাও চলে এসেছে। করোনাও তার গতি পালটে আরো ভয়ানক হয়ে উঠছে। ফলে ভিড়ভাট্টা এড়িয়ে চলাচল করাই ভালো। নিয়ম করে হাত ধোয়া ও মাস্কপরা জরুরি।