সাইকেল পরী ॥ অলোক আচার্য


কিশোর বয়স থেকে যৌবনে পা দেওয়ার বয়সটাই যেন মুগ্ধ হওয়ার বয়স। প্রকৃতির নতুন নতুন আয়োজন দেখে যেমন মুগ্ধ হই আবার শহুরে ব্যস্ততাও দৃষ্টি কেড়ে নেয়। প্রেমের আয়োজন সবে চোখে পরতে শুরু করেছে। মন কেড়ে নেয় রাস্তার পাশে হেঁটে যাওয়া কোনো কিশোরী। সাহসটা বেশি ছিল না। এক ধরনের ভয় ঘিরে থাকতো।

এমনই এক বয়সের সন্ধিক্ষণে আমি প্রেমে পড়ে গেলাম এক কিশোরীর। কিশোরীর নাম জানা নেই। অবশ্য প্রেমে পড়তে নামের বাধ্যবাধকতাও নেই। নিজের মতো করে একটা নাম দিলেই হলো। আমার নাম প্রদানের কাজটা আমার বন্ধুরাই করে দিলো। কি নাম দিলো সেই কথায় পরে আসছি। সেই কিশোরীর প্রেমের শুরুটা বলি।

আমি তাকে প্রথম দেখি এক বিকেলে। শেষ বিকেলে যখন সূর্য হলুদ আলো ছড়াচ্ছিল তখন। আমরা কয়েক বন্ধু মাঠ থেকে ফুটবল খেলা শেষ করে ফিরছিলাম। মাঠ পেরিয়ে সামনের দিকে আরেকটি খোলা জায়গা। আমাদের চোখ আটকে গেলো সেই খোলা জায়গায়। সেখানে এক কিশোরী দিব্ব্যি সাইকেল চালাচ্ছিল। বৃত্তাকারে ঘুরছিল মেয়েটা। আমাদের সময়ে একটা সাইকেল যেখানে ছুঁয়ে দেখাই সৌভাগ্য মনে করতাম সেখানে একটা মেয়ে চোখের সামনে নিয়ে ঘুরছিল। প্রথমত একটা সাইকেল তাও আবার একটা মেয়ে। তার সাইকেল চড়া দেখছিল আরও কিছু ছেলেপুলে। আমরা মেয়েটার সামনে না গিয়ে একটু লুকিয়ে দেখছিলাম। নিজেদের পৌরুষত্ব্যে আঘাত লাগছিল। অচেনা এই মেয়েটার পরনে ছিল লাল স্কার্ট। সাইকেলের হাওয়ায় চুলগুলো উড়ছিল। একটু দূর থেকে মেয়েটাকে পরীর মতোই লাগছিল। আমি মেয়েটার নাম দিলাম সাইকেল পরী।

বিকেল শেষে সন্ধ্যা নামে। বাড়ি ফিরে পড়তে বসেও মন বসাতে পারি না। যৌবন তখন হাত তুলে ডাকছে। সেই ডাক উপেক্ষা করার শক্তি আমার নেই। দু-একটা গল্প উপন্যাস পড়ার সুবাদে প্রেম শব্দটার সাথে পরিচয় ঘটেছিল আগেই। তার দু-একটা নায়কের চরিত্রের সাথে নিজেকে কল্পনা করতে শুরু করলাম। এই প্রথমবারের মতো আমার মনে হলো মেয়েটার প্রেমে পড়েছি। সেটা যে একতরফা বয়স কম হলেও তা বুঝেছিলাম।

সাইকেল পরী এসেছিল আমার পাশের বাড়িতে ইন্ডিয়া থেকে। মেয়েটার নাম নীলা। ক্লাস সেভেনে পড়ে। আরও জেনেছিলাম মেয়েটা খুব ভালো সাইকেল চালাতে পারতো। মেয়েটা সকাল বিকাল সাইকেল চালাতো। তার দর্শকেরও অভাব ছিল না। আমি এবং আমার বন্ধুরাও ছিল সেই দর্শকদের দলে। এই অব্যক্ত প্রেম বেশিদিন চলেনি। অল্পকিছুদিন পরেই মেয়েটি তার নিজ বাড়িতে চলে যায়। আর সেই সাথে শেষ হয় প্রথম যৌবনের প্রেমের।