সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার পেলেন স্বপ্নময় চক্রবর্তী


‘জলের উপর পানি’ উপন্যাসের জন্য বাংলা ভাষায় সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার পেলেন সাহিত্যিক স্বপ্নময় চক্রবর্তী।
তিন-চার বছর আগে ধারাবাহিকভাবে এই উপন্যাসটি প্রকাশিত হয় একটি বাংলা দৈনিকে। পরে ২০২১ সালে বই আকারে প্রকাশিত হয় সেই উপন্যাস।

স্বপ্নময় চক্রবর্তীর আরেকটি বিখ্যাত উপন্যাস ‘চতুষ্পাঠী’-এর পরবর্তী অধ্যায়ের কাহিনি শোনায় ‘জলের উপর পানি’। প্রকাশের সময় থেকেই পাঠকদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল এই উপন্যাস। পরে বই আকারে প্রকাশিত হয়। এবার সেই উপন্যাসের জন্যই সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার পেলেন এই সাহিত্যিক।

বুধবার (২০ ডিসেম্বর) চলতি বছরের সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। ২৪টি ভাষায় এই বছর পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। এই বছরের পুরস্কার প্রাপকের তালিকায় ৯টি কবিতার বই, ৬টি উপন্যাস, ৫টি ছোট গল্প, ৩টি প্রবন্ধ এবং একটি সাহিত্য অধ্যায়নের বই রয়েছে।

স্বপ্নময় চক্রবর্তীর মূলত ছোটগল্পকার হিসেবেই খ্যাতি ছিল একসময়। তার লেখা গল্প থেকে নাটক করেছেন বাদল সরকার। এরপর ধীরে ধীরে উপন্যাসে হাত পাকাতে শুরু করেন স্বপ্নময়। ব্যঙ্গ ও শ্লেষের সুর তার লেখার পরিচিত ও জনপ্রিয় আঙ্গিক। স্বপ্নময়-সুলভ আঙ্গিকেই বারবার ক্ষয়ে যাওয়া সময়ের অ্যাখ্যান তুলে ধরেন বর্ষীয়ান সাহিত্যিক। সমাজের কঠোর ও নগ্ন বাস্তবতা নগ্নতরভাবে তার লেখায় উঠে আসে। বারবার তার কাহিনির নায়ক হয়ে ওঠে বিভিন্ন ভাবে সমাজে প্রান্তিক হয়ে যাওয়া মানুষেরা।

প্রসঙ্গত, ‘জলের উপর পানি’ ও ‘চতুষ্পাঠী’ অনঙ্গমোহন নামে তেমনই এক সৎ ব্রাহ্মণের কাহিনি শুনিয়েছে বাঙালিকে। তার সাহিত্যের আঙ্গিক সমাজের ‘জাস্টিস’কেই আবার কাঠগড়ায় এনে দাঁড় করিয়ে দেয়।

স্বপ্নময় চক্রবর্তীর আর এক জনপ্রিয় উপন্যাস ‘হলদে গোলাপ’-ও একইভাবে প্রান্তিক মানুষের কথা বলে। তথাকথিত মূলধারার যৌন পরিচয়ের নিরিখে পিছিয়ে পড়া রূপান্তরকামী, সমকামী মানুষদের ঘিরেই সেই কাহিনি গড়ে ওঠা। চিত্রপরিচালক তথা সাহিত্যিক ও সম্পাদক ঋতুপর্ণ ঘোষের অনুরোধেই এই উপন্যাস লেখা শুরু করেন স্বপ্নময়। ঋতুপর্ণ ঘোষের প্রয়াণের পর সে কথা তিনি উল্লেখ করেছিলেন একটি লেখায়। পরে সেই উপন্যাসটিও পুরস্কৃত হয়েছিল বাংলার একটি বিখ্যাত পুরস্কারে।

১৯৫১ সালের ২৪ অগস্ট উত্তর কলকাতায় জন্ম হয় স্বপ্নময় চক্রবর্তীর। সাহিত্যের পাশাপাশি তার কর্মজীবনও কৌতুহলের উদ্রেক করে। একটা সময় ধূপকাঠির সেলসম্যানের কাজ করেছেন স্বপ্নময়। দারিদ্র্যের সঙ্গে দীর্ঘ লড়াইয়ের পাশাপাশি চালিয়ে গেছেন সাহিত্যকর্ম। এরপরে বেতারের সঙ্গে জড়িয়ে ছিল তার কর্মজীবন। বেতারের সেই অভিজ্ঞতাও বারবার উঠে এসেছে তার লেখায়। তার বসতবাড়িসহ পরিচিত এলাকা, মানুষগুলোকেও পাওয়া যায় তার সাহিত্যের অলিগলিতে। দীর্ঘদিন ধরে সেই সাহিত্য সাধনারই স্বীকৃতি পেলেন এবার।

সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস