তাকারাজুকা রেভ্যু ॥ প্রবীর বিকাশ সরকার


ছবি: প্রবীর বিকাশ সরকার

আই লাভ ইউ জাপান।
জাপানে দীর্ঘ বছর থেকে “তাকারাজুকা রেভ্যু” মিউজিক থিয়েটার দেখেনি এমন বিদেশির সংখ্যাই বেশি।আমিও বহু বছর ধরে এত শুনেছি, পড়েছি এর ইতিহাস অথচ সময় ও সুযোগই হয়নি দেখার। ১৪ মে ২০২২ দেখার সুযোগ হলো। আর এই সুযোগটা আমার স্বর্গবাসী বাবাই করে দিয়েছেন বলে আমার স্ত্রী নোরিকোর ভাষ্য।

১৪ মে ২০২২ ছিল বাবার দশম প্রয়াণ দিবস।মনটাও ভারাক্রান্ত ছিল। আমার স্ত্রী বলল, মন খারাপ করো না।বয়স হলে মানুষ অনন্তকালের পথে চলে যাবে এটাই চিরসত্য।আমার বাবাও তো চলে গিয়েছে ২০১১ সালে, এক বছরের ব্যবধানে।চলো তাকারাজুকা থিয়েটার দেখে আসি। টিনা দুটো টিকিট সংগ্রহ করেছে আমাকে নিয়ে দেখতে যাবে বলে।কিন্তু টিনা কাজে ব্যস্ত যাবে না বলছে, আমরা দুজনকে যেতে বলছে আজকে। তাকারাজুকার কথা তো জানোই, সহজে টিকিট পাওয়া যায় না আর ব্যয়বহুলও।

মন কেমন করে উঠলো। তাই তো! বাংলাদেশে থাকলে একটা ঘরোয়া স্মরণসভা করা যেত বাসায়।জাপানে যখন আছি বাবার পবিত্র স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে জগৎ-বিখ্যাত জাপানি নারীদের সৃজনশীল সংস্কৃতিচর্চার অপূর্ব কর্মকাণ্ড দেখে আসি।বাবা তো আমার সৃজনশীলতাকে সবসময় উৎসাহ দিয়েছে।খুশিই হবে।

সাড়ে তিন ঘণ্টার তাকারাজুকা গীতিনাট্য এবং গীতিনৃত্য দেখে লা জওয়াব অভিভূত হয়ে গেলাম।বহুতল বিশাল মিলনায়তন টোকিও তাকারাজুকা থিয়েটার বিখ্যাত ইম্পেরিয়াল হোটেলের পাশেই, ইউরাকুচোও শহরে।দর্শকে লোকারণ্য, প্রচণ্ড ভিড়।তিল ধারণের ঠাঁই নেই। সবাই নারী দর্শক, অধিকাংশ আবার তরুণী।পুরুষ একেবারে হাতগোনা কয়েকজন মাত্র।তাদের মধ্যে আমি অন্যতম।এর মূল কারণ হচ্ছে, “তাকারাজুকা রেভ্যু” হচ্ছে সম্পূর্ণভাবে নারীদের দ্বারা পরিচালিত ও অভিনীত।পুরুষ চরিত্রের অভিনয়ও নারীরাই করে থাকে।কোনো পুরুষ চরিত্র নেই।আর এটাই বিশেষত্ব।নারীদের মধ্যে এক কথায় অবিশ্বাস্য জনপ্রিয় এই তাকারাজুকা।বিশ্বে সম্ভবত এরকম দ্বিতীয়টি আছে কিনা জানা নেই।

যেমন অভিনয়, তেমন কণ্ঠস্বর, তেমন গতিশীল দৈহিক পারদর্শিতা। তাজ্জব। দেখে চোখের পলক পড়ে না, এত সুদক্ষ এবং নান্দনিক! মাল্টি-পারপাস-স্টেজও বিস্ময়কর। স্বয়ংক্রিয়ভাবে পর্দার বদল ঘটছে। ঘরবাড়ি, দোকান, সিঁড়ি, অ্যাভিনিউ ইত্যাদি বিশাল মঞ্চের মধ্যে নিচ থেকে উঠছে, নামছে, ঘুরছে সে এক এলাহিকাণ্ড বটে। সেইসঙ্গে একাধিক ভিডিও দৃশ্য চলমান যার ঝলোমলো রঙের বৈচিত্র‍্যে চোখ ধাঁধিয়ে যায়।

মোট কথা, একটা অসামান্য, অপূর্ব অভিজ্ঞতা হলাে বাবার জন্য, তাঁর নাতনি টিনার জন্য।

১৯১৩ সালে তাকারাজুকা কাগেকিদান বা তাকারাজুকা মিউজিক থিয়েটার আমেরিকার ব্রডওয়ে-স্টাইলে গঠিত হয় হিয়োগো-প্রিফেকচারের তাকারাজুকা শহরে।যা শতবর্ষ অতিক্রান্ত হয়ে আজও সমান জনপ্রিয়।