হয়তো দশ বছর পর এই মহামারি নিয়ে বিপুল আয়তনের কাজ হবে ॥ মোহাম্মদ নূরুল হক


বিশ্বজুড়ে চলছে কোভিড-১৯ এর দ্বিতীয় ঢেউ। নতুন রোগী শনাক্তের হার বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি সমানতালে বেড়ে চলেছে মৃত্যুর সংখ্যা।স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে ইতোমধ্যে দশ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। করোনায় বদলে গেছে বিশ্ব। বদলেছে মানুষের জীবনযাপন। শিল্প-সংস্কৃতিতেও এর প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে। এ নিয়ে যোগসূত্রের এ আয়োজন। এবারের সাক্ষাৎকার পর্বে পড়ুন কবি, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক ও ছোটকাগজ সম্পাদক মোহাম্মদ নূরুল হকের লেখালেখি নিয়ে।

যোগসূত্র: লকডাউনে কী পড়ছেন, কী লিখছেন?
মোহাম্মদ নূরুল হক: এখন পড়ছি জীবনানন্দ দাশের কবিতা। সঙ্গে তার প্রবন্ধও। আমার মনে হয়েছে, জীবনানন্দ দাশের কবিতা মাদকতাপূর্ণ। তার কবিতা মগজে কোনো প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে না, কিন্তু হৃদয়কে আলোড়িত করে। মনকে করে দেয় ইতস্তত, বিক্ষিপ্ত। ব্যক্তি তার চারপাশে কেবল শূন্যতা, হাহাকার আর জীবনের অনর্থ খুঁজে পায়। কখনো মনে হয় জীবন বিরহের ভাঁড়ার, কখনো মনে হয়, অচরিতার্থতা-ই জীবনের চরম সত্য, কখনো বা মনে হয়, অসীম ক্লান্তিময়। এই কারণেই এই মহামারিকালে, রুদ্ধসময়ে তার কবিতায় আশ্রয় খুঁজি। সঙ্গে তার প্রবন্ধে মিলিয়ে দেখি তার শিল্পচিন্তার নির্যাসও।

যোগসূত্র: কীভাবে কাটাচ্ছেন লকডাউনের দিনগুলো?
মোহাম্মদ নূরুল হক: আমি তো শ্রমজীবী মানুষ। কর্মস্থলে আসা-যাওয়া। কাজকর্মেই সময় কেটে যাচ্ছে। কাজের পর বাসায় ফিরে পড়াশোনা, মাঝেমাঝে সাহিত্যবিষয়ক বিভিন্ন ওয়েবিনারে যোগ দিচ্ছি।

যোগসূত্র: কোভিড-১৯ শিল্প-সংস্কৃতিতে কী প্রভাব ফেলছে?
মোহাম্মদ নূরুল হক: যেকোনো বড় দুর্ঘটনা কিংবা মহামারি পৃথিবীব্যাপী তার প্রভাব বিস্তার করে। একেকটি ঘটনা তাবত বিশ্বকে উলটপালট করে দেয়। মানুষের চিন্তাবিশ্বে শুরু হয় ব্যাপক পরিবর্তন। ধর্মীয় বিশ্বাস থেকে শুরু বৈজ্ঞানিক কার্যকারণ সম্পর্ক নিয়েও মানবমনে বিপুল আকারে পরিবর্তন ঘটতে থাকে। শিল্প-সাহিত্যেও পড়ে এর প্রভাব। তবে, অন্যান্য অঞ্চলে যত দ্রুত প্রভাব পড়ে, শিল্পে-সাহিত্যে ততটা তাৎক্ষণিক প্রভাব পড়ে না। এই অঞ্চলে প্রভাব শুরু হয় ধীরে ধীরে। কিন্তু তার রেশ বহুযুগ ধরে চলে। কোভিড-১৯-এর প্রভাবও পড়তে শুরু করেছে। কিন্তু বড় মাপের কাজ এখনো হয়নি। হয়তো দশ বছর কিংবা বারো বছর পর এই মহামারি নিয়ে বিপুল আয়তনের কাজ হবে।

যোগসূত্র: কীভাবে করোনা থেকে উত্তরণ সম্ভব?
মোহাম্মদ নূরুল হক: করোনা থেকে কিভাবে উত্তরণ সম্ভব, এই প্রশ্নের উত্তর একজন শ্রমজীবী কিংবা সাহিত্যকর্মী হিসেবে দেওয়া অসম্ভব প্রায়। এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেন স্বাস্থ্যকর্মী, চিকিৎসকরা। তবে, চিকিৎসকদের পরামর্শটুকু এখানে মনে করিয়ে দিতে পারে কেবল। সেগুলো হলো, মাস্ক পরা, ঘন ঘন সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, হ্যান্ডস্যানিটাইজার ব্যবহার করা। আর অতি অবশ্যই ভিড় এড়িয়ে চলা। কোথাও গেলেও অন্তত তিন ফুট দূরত্ব বজায় রেখে চলা। দাঁড়ানো। বসা। হাঁচি-কাশির শিষ্টাচার মেনে চলা। তাহলেই করোনা সংক্রমণ কমানো যাবে। কিন্তু উত্তরণ কিভাবে হবে, সেই সমাধান আমার মতো লোকের পক্ষে দেওয়া সত্যিই অসম্ভব।