পাখি ও কাঠবিড়ালি আমার দিনগুলোকে মাতিয়ে রাখে ॥ সাব্বির জাদিদ


বিশ্বজুড়ে চলছে কোভিড-১৯ এর দ্বিতীয় ঢেউ। নতুন রোগী শনাক্তের হার বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি সমানতালে বেড়ে চলেছে মৃত্যুর সংখ্যা।স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে ইতোমধ্যে দশ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। করোনায় বদলে গেছে বিশ্ব। বদলেছে মানুষের জীবনযাপন। শিল্প-সংস্কৃতিতেও এর প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে। এ নিয়ে যােগসূত্রের এ আয়োজন। এবারের সাক্ষাৎকার পর্বে পড়ুন কথাসাহিত্যিক সাব্বির জাদিদের লেখালেখি নিয়ে।

যােগসূত্র: লকডাউনে কী পড়ছেন, কী লিখছেন?
সাব্বির জাদিদ: রমজান মাসে যেহেতু লকডাউন চলছে, প্রতিদিন নিয়ম করে কোরআন পড়ি। মানে তেলাওয়াত করি। কোরআন অদ্ভুত দ্যোতনাময় এক কাব্যিক গ্রন্থ। সুর করে যখন পড়ি, মনটা অন্যরকম হয়ে যায়। এর পাশাপাশি কোরআনের অনুবাদও পড়ছি। আমি একসাথে অনেকগুলো বই পড়ি। রিজিয়া রহমানের বং থেকে বাংলা, মুজাফফর আহমদের আমার জীবন ও ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি, ড. ইউসুফ আল কারজাভীর ইসলাম ও শিল্পকলা পড়ছি। মানিক আমার প্রিয় লেখক। মাঝে মাঝে তার ছোটগল্প পড়ি। ইদানীং কলকাতা সম্পর্কে জানতে ইচ্ছে করে। তাই কলকাতা সম্পর্কিত অনেক বই পড়ছি। পড়ছি ছেচল্লিশের দাঙ্গার ইতিহাস। ড. রাগিব সারজানির ‘মুসলিমজাতি বিশ্বকে কী দিয়েছে’ বইটাও পড়ছি।

আর লেখার কথা যদি বলি, এই অবরুদ্ধ কালে সেই অর্থে কিছু লিখতে পারছি না। একটা বড় উপন্যাস লেখার চেষ্টা করছি। পাশাপাশি বেশকিছু ছোটগল্পের ভাবনা মাথায় জমে আছে। সেগুলোও মাথা থেকে কাগজে আনার চেষ্টা করছি।

যােগসূত্র: কীভাবে কাটাচ্ছেন লকডাউনের দিনগুলো?
সাব্বির জাদিদ : আমি আক্ষরিক অর্থেই প্রকৃতির ভেতর থাকি। তাই লকডাউন আমার জীবনে সেভাবে প্রভাব ফেলছে না। বাড়ির উঠোনে টমেটো, মরিচ, উচ্ছে, চালকুমড়ো, পুঁইশাক লাগিয়েছি। এছাড়া আট-নয় প্রজাতির ফুলগাছ আছে আমার। অবসরে এগুলোর পরিচর্যা করে সময় কাটে। প্রখর রোদ পড়ছে তাই নিয়মিত পানি দিতে হয়। আমার বাড়ির চারপাশ গাছপালায় ঘেরা। অজস্র পাখি এবং কাঠবিড়ালি আমার দিনগুলোকে মাতিয়ে রাখে। গরম এবং খরার জন্য উঠোনে, গাছের ছায়ায় বাটিতে পানি দিয়ে রাখি। পাখিরা এসে খায়। আমার বারান্দার তক্তার ওপর এক জোড়া ঘুঘু খড়কুটো দিয়ে বাসা বানিয়েছে। ওদের ঘরকন্না দেখি। নারকোল গাছের খোলের ভেতর শালিক বাচ্চা ফুটিয়েছে। ওদের মা-বাবা বাচ্চার খাবারের জন্য ছুটোছুটি করে। আমি অন্য খাবারের সাথে প্রতিদিন একটা পাকা কলা দিয়ে রাখি। ওদের বাবা-মা কলার টুকরো ঠোঁটে নিয়ে উড়ে বাচ্চার ঠোঁটে রেখে আসে। এসব দেখি। আমার ঘরের পেছনে মস্তবড় একটা পুকুর আছে। সেখানে এক জোড়া ডাহুক থাকে। ডাহুকের ডাকে সারারাত মুখর থাকে বাড়িটা। ভোরে পুকুরপাড়ে দাঁড়িয়ে ওদের ডাক শুনি। এছাড়া কিছুদিন আগে অদ্ভুত এক পাখি আবিষ্কার করেছি। ইন্টারনেটে এই পাখির নাম জেনেছি ‘ল্যাঞ্জা রাতচরা’। বাংলাদেশে বিলুপ্তপ্রজাতির পাখির অন্যতম ল্যাঞ্জা রাতচরা। এরা দিনের বেলা আমাদের বাঁশঝাড়ের পাতার ভেতর পাতার রঙের সাথে মিশে বসে থাকে। আর রাতে আমগাছে বসে অদ্ভুত স্বরে ডাকে। লাইটের আলোর চারপাশে উড়তে থাকা ‘মথ’ নামের পোকা এদের একমাত্র খাবার। রাসায়নিক সারের তীব্র ব্যবহারে মথ পোকা ধ্বংস হচ্ছে বলে এদের খাবারও নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। ফলে ল্যাঞ্জা রাতচরার অস্তিত্ব বিলুপ্তির মুখে। কিছুদিন আগে আমাদের এই পাখি বাচ্চা তুলেছে। আমার লকডাউন পাখির সাথে, ফুলের সাথে কাটছে।

যােগসূত্র: কোভিড-১৯ শিল্প-সংস্কৃতিতে কী প্রভাব ফলেছে?
সাব্বির জাদিদ :শিল্প-সংস্কৃতিতে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে কোভিড-১৯। এবারের বইমেলা তার জ্বলন্ত উদাহরণ। শিল্প-সংস্কৃতির অনেক গুণীজন আক্রান্ত হচ্ছেন, অনেকেই মারা যাচ্ছেন। ভয়াবহ এক শূন্যতা তৈরি হচ্ছে। অবরুদ্ধতার কারণে ভালো লেখাও লিখতে পারছেন না লেখকগণ।

যােগসূত্র: কীভাবে করোনা থেকে উত্তরণ সম্ভব?
সাব্বির জাদিদ: করোনা থেকে খুব সহজে মুক্তি মিলবে বলে মনে হয় না। এই মহামারিকে সাথে নিয়েই আমাদের জীবন-যাপনে অভ্যস্ত হতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি এবং সতর্কতার কোনো বিকল্প দেখছি না।