স্বপ্ন দেখাবো না, এ নিয়তে রাত না বাড়তেই
ঘুমিয়ে পড়ি রোজ।
তবে তার আগে চান্দিতে
একরতি জবাকুসুম লাগাই,
রেগুলেটার ঘুরিয়ে গতি বাড়াই ফ্যানের,
পিতামহীর দেওয়া স্বপ্নহীন মাদুলিটা
মাথার চারপাশে
ঘুরিয়ে সুরা ফালাক্-নাস পড়ে ফুঁ দিই।
দু’চোখ আঁধার করে চোরা-আসক্তির মতন
ঘুম এলে প্রশান্ত অনস্তিত্বে
তলিয়ে যাই আমি অনুভবহীন অতলে।
হঠাৎ বামদিক হতে এক ফেরিওয়ালা
কপালে মোহন চুমু দিয়ে আমাকে জাগায়,
শব্দের ফুলঝুরি ছড়িয়ে বলে:
‘স্বপ্নছাড়া বাঁচবে কী করে ভাই?
আমার কাছে স্বপ্ন আছে !
লাল স্বপ্ন,
নীল স্বপ্ন,
লম্বা স্বপ্ন,
খাটো স্বপ্ন,
এবং পাঁচমিশালী স্বপ্ন।
স্বপ্ন দিয়েই ঢাকা আমাদের অতীত,
স্বপ্ন দিয়ে ভরা আমাদের বর্তমান,
স্বপ্ন নিয়েই যাবো আমরা ভবিষ্যতে।
তুমি হয়তো জানো না,
তোমার সে পূর্বপুরুষেরা
ভূরি ভূরি স্বপ্ন দেখতেন,
আর প্রত্যেক সকালে খোয়াবনামা ঘেঁটে
গফুর মারফতীর কাছে
ব্যাখ্যা শুনতেন হা করে;
আর তাজ্জব তুমি সেই বংশের
ছেলে হয়ে কাটাতে চাও স্বপ্নহীন রাত?’
আমি বলি: ‘শূন্য গোলা, শূন্য গোয়ালও-
আকাশের নিচে অগণিত মাথা;
স্বপ্ন দিয়ে তো
ক্ষুধাতুরের পেট ভরে না একবেলাও!’
ফেরিওয়ালার বিরক্ত স্বর: ‘আহা!
বোঝো না কেন-স্বপ্নটাই মানুষের জীবন!
রুটি-মাংস-ডালভাত এইসব
আদতে ইতর-চাহিদা;
জেনে রাখো-একমুঠো স্বপ্ন বহুগুণে মূল্যবান
একগুদাম মোটা চালের চেয়ে;
আমাদের গরুমার্কা স্বপ্নগুলো কালোত্তীর্ণ
আর এ কৃষিপ্রধান দেশে কার্যকরি ষোলআনা;
অতএব নিজে নাও,
বাড়তি দামে অন্যদেরও দাও, বেশি বেশি;
ঠকবে নাকো মোটেই।’
দ্বিমত পোষণে আমি: ‘ক্ষুধার অন্ন আর
বস্ত্রহীনের বস্ত্র ছাড়া
আমরা চাই না অন্যকিছু;
আমাদের এ-জীবন তো আমাদেরই,
স্বপ্নহীন যায় যদি আমাদের রাত কিংবা দিন,
তাতে কী ক্ষতি অন্যের ?
আর জোর করে স্বপ্ন দেবে,
গণতান্ত্রিক দেশে এটা কেমন কথা ভাই?’
অগ্নিশর্মা ফেরিওয়ালা পিস্তল বের করে
গর্জে ওঠে:
‘আমাদের স্বপ্ন নিয়ে হেলাফেলা?
আমাদের পূর্বপুরুষের অসম্মান?
যদি স্বপ্নহীন বাঁচার সখ এতই,
তবে যাও শালা একেবারে স্বপ্নহীন দেশে!’
রুদ্ধ আর্তনাদে টুটে যায় আমার ঘুম;
তৎক্ষণাৎ বুক চেপে উঠে বসি
ঘামভেজা বিশৃৃঙ্খল চাদর;
বালিশটার দিকে হাত বাড়াতেও ভয় পাই।