অবকাশে একদিন আনন্দের ঝরনাধারা ॥ সাইফ বরকতুল্লাহ


ছবি: লেখক

সকাল ৮টা। মাঘের সকাল। হালকা বাতাস সবার শরীরে শীতের পরশ বুলিয়ে যাচ্ছে। সবার চোখেমুখেই উচ্ছ্বাস। কারণ, মাথা, হাতের আঙ্গুল আর সবকিছুরই ছুটি। ঘোষণা হলো সবাই গাড়িতে উঠুন, এখনই বাস ছেড়ে যাবে। ব্যাস, সবাই উঠে গেলেন বাসে। রাজধানী ঢাকার দৈনিক বাংলা মোড় থেকে ছেড়ে দিল বাস।

৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬। দিনটি শুক্রবার হওয়ায় খুব যানজট পোহাতে হয়নি। গাড়ি কিছুদূর যাওয়ার পরই সহকর্মী রাসেল পারভেজ শুরু করেন নাচ আর গান। হালকা শীতের মিষ্টি আবহে তার সঙ্গে সহকর্মীদের অনেকেই যোগ দেন নাচে-গানে। ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই গাড়ি রাজধানী অতিক্রম করে পৌঁছে যায় টঙ্গী স্টেশন রোডে। এখানে গাড়িতে সঙ্গী হন আমাদের (রাইজিংবিডির) নির্বাহী সম্পাদক তাপস রায়। তিনি গাড়িতে উঠার পর সহকর্মী উজ্জল জিসান তার হাতে হ্যান্ড মাইক ধরিয়ে দেন।

তিনি উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে বলে উঠলেন, আপনরাদের ডিম দেওয়ার কথা ছিল, চিন্তা কইরেন না, জায়গা মতো পৌঁছে গেলেই ডিম দেওয়া হবে।

প্রথমেই শুরু হলো চেয়ার দখল। এরপর পিলো পাসিং। প্রতিযোগিতা শেষে অনুষ্ঠিত হলো র‌্যাফল ড্র। অনেকেই পুরস্কার পেলেন। সবার মুখেই আনন্দ আর হাসির ঝরনাধারা। কতদিন এমন মুক্ত জায়গায় যাওয়া হয় না! এমনিতেই রাজধানীতে বন্দি জীবন, তার ওপর আবার সাংবাদিকতা পেশা। সাংবাদিকদের ২৪ ঘণ্টা প্রস্তুত থাকতে হয় তথ্য সংগ্রহের জন্য। আজ ছিল না সে কাজ। বনভোজনে গিয়ে শ্যামল ছায়ায় স্নিগ্ধ হাওয়ার পরশে আমাদের প্রাণে বয়ে যায় আনন্দের ঢেউ।

আমরা মেতে উঠেছি কবিতা, কৌতুক, গান আর আড্ডায়। সবার হৃদয়ের গহিন থেকে নিসৃত আনন্দের ঝিলিক চোখেমুখে। এভাবে কখন যে বেলা ৪টা বেজে গেল বোঝাই গেল না। এমন সময় ঘোষণা এলো বিকেল ৫টায় বাস ছেড়ে দেবে। সবাই ব্যাগ, জিনিসপত্র গুছিয়ে নিচ্ছেন। আমরা কয়েকজন এই ফাঁকে চলে গেলাম বাঁশের সাঁকোতে।

ওখানে দাঁড়িয়ে ফানুস উড়িয়ে চেয়ে রইলাম আকাশের দিকে। গোধুলিবেলায় মন চাইছিল না ফিরতে। তারপরও ধীর পায়ে সবাই যাচ্ছিলেন গাড়িতে ওঠার জন্য।

এরই মধ্যে দেখি শাহনেওয়াজ ভাই হারমোনিয়াম নিয়ে বসে গেছেন গানের আসরে। আহ! কতদিন তার এমন গান গাওয়া হয় না! গলা ছেড়ে দিলেন সুরে, ‘বন্দে মায়া লাগাইছে..।’

গানের তালে মুস্তাফিজ শুরু করলেন নাচ। আমি দোলনায় উঠে গানের তালে দোল খেলাম। কিছুটা সময় তালে তালে দোল। এরপর ইতি ঘটলো গানের। ধীরে ধীরে সবাই সব পেছনে ফেলে চলে এলাম গাড়িতে। ততক্ষণে অন্ধকার নেমেই এসেছে। গাড়ি ছেড়ে দিল।