আধুনিক ফিলিস্তিনি গল্প ॥ রামালায় প্রেম


অলঙ্করণ: লংরিড

রামালায় প্রেম
মূল: ইব্রাহিম নাসরাল্লাহ
অনুবাদ: ফজল হাসান

এক.
ওয়ার্দা উম্ম ওয়ালিদের দরজায় কড়া নাড়ে এবং কয়েক মুহূর্ত পরে একজন মহিলা দরজা খুলে বেরিয়ে আসে ।১
‘স্বাগতম ।২ আমি তোমার জন্য কী করতে পারি, মাই চাইল্ড?’
‘আমি শুনেছি আপনাদের বাড়িতে একজন অবিবাহিত যুবক আছে,’৩ বলল ওয়ার্দা ।
‘ঠিক আছে, কিন্তু সে ঠিক যুবক নয়,’ উম্ম ওয়ালিদ থতমত হয়ে বললেন ।
‘তাহলে কোন বিভ্রান্তি নেই, আমি কি দেখতে পারি, তাকে কি ডাকা হয় … ইয়াসীন?’
‘হ্যাঁ, সে-ই,’ উম্ম ওয়ালিদ মাথা নাড়েন ।
‘তাহলে সে একজন যুবক!’ ওয়ার্দা বিস্মিত হয়ে বলল ।
‘কিন্তু তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার আগে তার সঙ্গে তোমার দেখা করা দরকার, তুমি কী তাই মনে করো না?’
‘না, সত্যি তার কোন প্রয়োজন নেই।সে কী এখানে আছে?’
উম্ম ওয়ালিদ মাথা দোলান।
‘সত্যি সে যদি এখানে থাকে, কিন্তু লুকিয়ে আছে, তবে তাকে বলে দিন যে একটি মেয়ে তার বাড়িতে অবস্থান করবে, যতক্ষণ না সে মেয়েটিকে বিয়ে করতে সম্মত হয়!’
‘তাহলে এই কী তোমার শেষ কথা?’ উম্ম ওয়ালিদ জিজ্ঞেস করেন ।
‘শেষ কথা!’
‘তুমি যদি ইয়াসীনকে ছাড়া অন্য কারোর কথা জিজ্ঞেস করতে, তাহলে আমি বলতাম তুমি একটা আস্ত উন্মাদ ।’
ওয়ার্দা হাসে: ‘আল-হামদুলিল্লাহ্, আমার হৃদয়টা শান্ত হয়েছে ।’

উম্ম ওয়ালিদ যখন ইয়াসীনকে ঘটনা বলে, তখন ইয়াসীন হাসি থামাতে পারেনি ।
‘এটা একটা ভালো লক্ষণ, তুমি কী তাই মনে করো না?’ উম্ম ওয়ালিদ জিজ্ঞেস করেন ।
‘আমি ভাবছি মেয়েটি কিভাবে আমার বাড়ির সন্ধান পেয়েছে।’
‘মেয়েটি বলেছে যে সে তোর জীবন এবং কারাবাস সম্পর্কে নাটক থেকে তোর সম্পর্কে জানতে পেরেছে এবং সে ভেবেছে যে আসল ঘটনা আরও চমকপ্রদ হবে।তাই সে মনের টানে এখানে এসেছিল।’
দীর্ঘ সময় চুপ করে থেকে ইয়াসীন জিজ্ঞেস করে, ‘কিন্তু মেয়েটি সম্পর্কে আপনি কী মনে করেন?’
‘সত্যি বলব?’
‘অবশ্যই!’
আরও অনেকক্ষণ পরে নীরবতা কেটে যায়।তারপর একসময় উম্ম ওয়ালিদের সমস্ত মুখমণ্ডলে হাসি ছড়িয়ে পড়ে।তিনি বললেন, ‘তোকে সত্য বলছি, আমি মেয়েটিকে পছন্দ করেছি ।’
সুতরাং ইয়াসীন বলল, ‘আমি একই কথা বলতে চাই, এমনকি মেয়েটির সঙ্গে দেখা হওয়ার আগেই!’

দুই.
‘সত্যি বলছি, তোমার চেহারায় বয়সের ছাপ ফুটে উঠেছে, নাঈম,’ ইয়াসীন বলল।
‘আমাদের সবারই বয়স বাড়ছে,’ জবাবে নাঈম বলল। ‘এমনকি তুমি এখন আর আমার সঙ্গে ফুটবল খেলো না! তোমার কী মনে পড়ে প্রতি সপ্তাহে তুমি আমাকে এবং স্থানীয় অন্য ছেলেদের নিয়ে খেলতে যেতে? আর এখন তুমি তাদের ছেলেদের নিয়ে যাও।’ একটু থেমে সে আরও যুক্ত করে, ‘তোমার ছেলেদের কী খবর? এখন কী তোমার বিয়ে করার বয়স না এবং কয়েকজন সন্তান হোক?’
‘আমি? নাহ, আমাদের লোকদের আরেকজন বিধবা এবং আরও অনাথ ছেলে-মেয়ের প্রয়োজন নেই। এখানে যথেষ্ট কষ্ট আছে! তুমিই একমাত্র ব্যক্তি, যার বিয়ে করা উচিত।’
‘না, আমি সুযোগ হারিয়েছি, দোস্ত এবং আমি মালগাড়ির দায়িত্ব নিচ্ছি না,’ বলেই ইয়াসীন হাসে। ‘আমার কথায় গুরুত্ব দিও না।’
‘তুমি যদি অন্য কিছু বলতে, তবে আমি বলতাম যে কারাগার তোমাকে বদলে দিয়েছে,’ জবাবে নাঈম বলল ।

দুই পাহাড়ের মাঝে ইসরায়েলি চেকপয়েন্টে রামালায় যাওয়ার বাস থামাতে হয়।জায়গাটির নাম উয়েন আল-হারামিয়া৪।এমন কোনদিন ছিল না যখন সৈনিকেরা এই জায়গায় অবস্থান করেনি। প্রথমে ছিল বৃটিশ সৈন্য; তাদের পরে জর্ডানের সৈন্য এবং এখন আমাদের আছে ইজরায়েলি সৈন্য।ইয়াসীন এই সব জানতো।
‘এখানে একদিন আমাদের চেকপয়েন্টে হবে,’ নাঈম বলল।
‘তুমি কী দেখতে পাচ্ছ আমাদের উচ্চাকাঙ্ক্ষা এখন কতটা বিশাল?’ ইয়াসিন পাল্টা বলল।
ওরা বাসের সব যাত্রীদের নেমে আসার জন্য হুকুম করে।একজন সৈনিক বাসে ওঠে এবং মাঝের সরু পথ পেরিয়ে শেষ মাথায় যায়।অতপর সে বাসের ভেতর থেকে টারম্যাকে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীদের মুখের দিকে তাকিয়ে উদাসীনতা ছাড়া অন্য কোনো অভিব্যক্তি খুঁজতে থাকে।

সৈনিকটি বাস থেকে নেমে যায় এবং যাত্রীদের চারপাশে চক্কর দেয়। একসময় সে একজন আকর্ষণীয় অল্পবয়স্ক মেয়ের দিকে তাকানোর জন্য মেয়েটির পাশে থামে। সে কয়েক কদম এগিয়ে যায় এবং পুনরায় থামে। পেছনে ঘুরে সে অন্য তিনজন সৈনিককে কাছে আসতে ইশারা করে। তারা পনের মিটার দূরে দাঁড়িয়ে দৃশ্য অবলোকন করছিল।

তিনজন সৈনিক প্রথম সৈনিকের দিকে এগিয়ে আসার সময় প্রথম সৈনিকটি যাত্রীদের লাইনের শেষ মাথায় হেঁটে যায় এবং ইয়াসীন ও নাঈমের সম্মুখে থামে।তারপর সে নাঈমকে লাইন থেকে বের হয়ে সামনে আসতে ইশারা করে।

নাঈম চেকপয়েন্ট সম্পর্কে সবকিছুই জানত।সে সবাইকে চিনত এবং প্রথমদিন থেকেই তারা তার জন্য অপেক্ষা করত। অভিজ্ঞতা থেকে সে জানত যে, দিনের এই সময়ে সৈন্যরা তাদের নিজস্ব বিনোদনের জন্য যাত্রীদের সঙ্গে আমোদ-প্রমোদ করতে ভালোবাসে, এমনকি তাদের খেলার সরঞ্জাম হিসেবে যাত্রীদের বিবেচনা করতে পছন্দ করে।

বিকেল সাড়ে চারটের সময় দু’পাহাড়ের মাঝে যথেষ্ট উত্তপ্ত বাতাস ছিল। ইয়াসীন বাসের পিছনে থেমে থাকা মোটর গাড়ির বহরটি একবার দেখে নেয়।লোকজনের চোখ থেকে নির্গত নীরব অভিশাপ শোনার জন্য কারোর কোনো পরাশক্তির প্রয়োজন ছিল না, বিশেষ করে শরীরী ভাষা, যা চারপাশের সবকিছুর সঙ্গে তাদের হতাশা বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল ।
‘এদিকে আসো!’ অনড় নাঈমকে উদ্দেশ্য করে সৈনিকটি ঘেউ ঘেউ করে।

প্রথম সৈনিকটি সরাসরি আকর্ষণীয়া যুবতী মেয়েটির সামনে গিয়ে থামে এবং নাঈম সৈনিকটির পেছনে দাঁড়িয়ে আছে।সৈনিকটি ঘুরে দাঁড়ায়, নাঈমের দিকে তাকায় এবং তারপর পুনরায় মেয়েটির দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায়।

‘তুমি কী চাও পাশ বাসটি কেটে চলে যাক?’ প্রথম সৈনিকটি নাঈমকে জিজ্ঞেস করে।সম্মতির ভঙ্গিতে নাঈম মাথা নাড়ে।
‘তুমি যদি বাসকে অতিক্রম করে যেতে দিতে চাও, তবে অবশ্যই ওকে চুমো খেতে হবে,’ তরুণীর দিকে আঙুল উঁচিয়ে সৈনিকটি বলল।
অন্য সৈন্যদের চোখ ঝলকে উঠে।তারা খেলাটা পছন্দ করেছে এবং তারা তাদের উৎসাহিত হয়েছে।অন্যদিকে যাত্রীরা একে অপরের দিকে বিস্মিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।তরুণীর কাছে পুরো বিষয়টি প্রচণ্ড ধাক্কার মতো মনে হয়।

বাসের পেছনে থেমে থাকা মোটর গাড়ির ভেঁপুর শব্দ এক মুহূর্তের জন্য নিস্তবদ্ধতাকে চুরমার করে ভেঙে দেয়।
‘কোন গাধায় ভেঁপু বাজায়?’ প্রথম সৈনিকটি আর্তনাদ করে উঠে এবং সঙ্গে সঙ্গেই সে গাড়ির দিকে যেতে শুরু করে। গাড়ির চালক কিছুতেই তাকে বোঝাতে পারছিল না যে, আকস্মিকভাবে ভেঁপু বেজে উঠে।কিন্তু সৈনিকটি জোরাজুরি করছিল যেন মোটর গাড়িটি দীর্ঘ লাইন ছেড়ে বেরিয়ে আসে এবং ঘুরে যেখান থেকে এসেছে, সেখানে ফিরে যায়, অর্থাৎ নাবলুস।

‘তুমি যদি রাতে এখানে ঘুমাতে চাও, তাহলে থাকো, অথবা নাবলুসে ফিরে যাও।কিন্তু আজ তোমার জন্য কোন রামালাহ নেই, বুঝতে পেরেছ?’

কয়েক মিনিট পরে যাত্রীসহ মোটর গাড়ি চেকপয়েন্ট ছেড়ে আরেক চেকপয়েন্টের দিকে চলে যাচ্ছিল, যা তারা কিছুক্ষণ আগে পেছনে ফেলে এসেছে। মোটর গাড়ির ভেতর থেকে তিনটি বাচ্চা পেছনের জানালা গলিয়ে তাকিয়ে সেই সময় ঘটে যাওয়া ঘটনা বোঝার চেষ্টা করছিল।
প্রথম সৈনিকটি পেছন ফিরে নাঈমের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘তুমি কী মনে করো, ঘটনা শেষ হয়ে গেছে? তোমার উপর নির্ভর করছে।তোমরা ফিলিস্তিনিরা সবসময় স্বাধীন সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা বলছ।ঠিক আছে, তুমি যদি চাও বাস এবং বাসের পেছনে থেমে থাকা মোটর গাড়িগুলো চলে যাক, তবে আমি যা বলেছি, তাই করো।’

যুবতী মেয়েটি মেঝের উপর মাথা দিয়ে আঘাত করে।এই সময় পর্যন্ত সে লজ্জার দরিয়ায় ডুবে ছিল।তার চোখে অশ্রুর প্লাবন এবং সে নাঈমের দিকে অসহায় ভাবে ফাঁকা চোখে তাকায়।নাঈমকে দেখে মনে হচ্ছিল যেন সে-ও নিজে আরো বড় দরিয়ায় ডুবে আছে।

সত্যি কথা বলতে কি, চেকপয়েন্ট সম্পর্কে তার সমস্ত জ্ঞান থাকা সত্ত্বেও নাঈম কখনই এই জাতীয় দৃশ্যের কথা ভাবেনি।সে তার বন্ধু ইয়াসীনের দিকে তাকায় এবং আবিস্কার করে যে, ইয়াসীন যেন বিস্ফারিত দৃষ্টি মেলে নিজের মধ্যে হারিয়ে গেছে।
‘তুমি যা করতে বলেছ, আমি তা করব না।’
‘আমি বলেছি, তুমি মুক্ত খাবিবি৬। তুমি যদি না চাও, তাহলে চুমো খেও না।কিন্তু তুমি এবং অন্য সবাই যদি এই চেকপয়েন্ট পেরিয়ে যেতে চাও, তবে চুমো খাও।তারপর সৈনিকটি যেই চলে যাচ্ছিল, তখন সে আরও বলল, ‘যেখানে আছ, সেখান থেকে সরবে না।অপেক্ষা করো।’
চেকপয়েন্টের সম্মুখে সৈনিকেরা নিজেদের মধ্যে হাসাহাসি করছিল। তারা তাদের পকেটে খুচরো পয়সা খুঁজে বের করে এবং অন্যদের দিকে এগিয়ে দেয়।কেননা তারা সে যুবতী মেয়েটিকে চুম্বন করবে কিনা, তা নিয়ে বাজি ধরতে শুরু করে।সে মেয়েটিকে চুম্বন করবে, বলেই প্রথম সৈনিকটি পকেট থেকে কিছু খুচরো বের করে বালির বস্তার উপর ছুড়ে দেয়। সূর্য্য ডুবতে শুরু করেছে এবং যাত্রীদের মনে হয় তারা যেন সময়ের মহাশূন্যে ঝুলে আছে।
‘তুমি বললেও আমি তা করব না।’
আর তাই রাইফেলের গোড়া নাঈমের উরুতে আঘাত করেছিল।সে মাটিতে পড়ার আগে সবাই তার উরুতে আঘাতের শব্দ শুনেছিল। সৈনিকটি পায়ের জ্যাকবুট দিয়ে তার পেটে প্রচণ্ড জোরে লাথি মারে।
‘আমরা এখানে ব্যস্ত আছি।আমি তো আগেই বলেছি তুমি যদি মেয়েটিকে চুম্বন করো, তাহলে সবাই চলে যেতে পারবে।যদি তা না হয়, তবে এখানে ঘুমিয়ে পড়ো।’
‘তুমি বললেও আমি তা করব না।’
অন্য সৈন্যরা প্রথম সৈনিকটির এই জঘণ্য খেলার প্রতিবাদ করেছিল এবং তারা ভেবেছিল যে, তার সহিংসতার ব্যবহার বাজির ফলাফল পরিবর্তন করতে পারে।কিন্তু প্রথম সৈনিকটি সহকর্মীদের অভিযোগ কানে তোলেনি।
আরেকটা আঘাতের শব্দ হয়। নাঈম সৈন্যদেরকে ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু পালানোর কোন পথ খোলা ছিল না।তার কপাল থেকে রক্ত ঝরছিল।একসময় প্রথম সৈনিকটি চলে যায়।মনে হয়েছিল যেন সবকিছু বিস্ফোরিত হতে চলেছে।সারিবদ্ধ যাত্রীরা নড়াচড়া করতে না পেরে দৃশ্যটি দেখার সময় তারা অস্থির হয়ে উঠেছিল।কয়েকটি মোটর গাড়ি এবং বাসের যাত্রীরা নেমে রাস্তার উভয় পাশে দাঁড়িয়েছিল। সৈন্যরা তাদের দিকে বন্দুক উঁচিয়ে ধরে এবং তাদেরকে মোটর গাড়ি ও বাসে ফিরে যাওয়ার জন্য আদেশ করে।
তখন এমন সময় যে, নাঈমের সামনে কেউ মেয়েটিকে মাথা নুইয়ে থাকতে দেখেনি।নাঈমের হাত ধরে মেয়েটি ফিসফিস করে বলল, ‘আমাকে চুম্বন করুন, আমি আপনাকে অনুরোধ করছি!’

নাঈম পুনরায় যাত্রীদের দিকে তাকায়।তারা মাটির দিকে দৃষ্টি আবদ্ধ করে রেখেছে, যেন তারা সেখানে উপস্থিত নেই।
নাঈম মেয়েটির ডান গালে আলতো করে চুম্বন করে।যেই তার ঠোঁট মেয়েটির মুখমণ্ডল স্পর্শ করে, ঠিক তখনই কয়েকজন সৈনিক ‘উপস্’ আওয়াজ তোলে, যেন তারা তাদের দলের বিজয়ী গোলের জন্য উল্লাস করছে।অন্যদিকে তাদের মধ্যে বাকিরা বিরোধিতা করে বিড়বিড় করে ।
বাসটি যখন চেকপয়েন্টের পাশ কেটে চলে যায়, তখন যাত্রীদের চোখেমুখে লজ্জা, নিপীড়ন, আক্রোশ, ক্রোধ এবং অস্বীকৃতির মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। তারা ভগ্ন হৃদয়ে মেঝের দিকে তাকিয়ে থাকে। বাসের মধ্যে নীরব ছিল নতুন যাত্রী, যা সব যাত্রী সঙ্গী হিসেবে গ্রহণ করে ।

যখন সবার মাথা নত হয়ে আছে, তখন মেয়েটি মাথা তোলে। সে নাঈমের দিকে তাকায়, যেন নাঈম তার তাকানো বুঝতে পারে। একসময় নাঈম মাথা উঁচু করে এবং মেয়েটির দিকে দৃষ্টি প্রসারিত করে, যা শেষ গন্তব্য পর্যন্ত ছিল। যাত্রীরা আসন ছেড়ে ইয়াসীনকে অনুসরণ করে।শুধু দুজন বাসের মধ্যে বসে থাকে; একজন নাঈম এবং আরেকজন যুবতী মেয়েটি।

তিন.
সবসময় যখন উম্ম ওয়ালিদ জানালার কার্ণিশে গোলাপের তোড়া খুঁজে পান, তখন তিনি জানতে পারেন কখন তার ভাগ্নে এসেছিল।
প্রথমে উম্ম ওয়ালিদ ইয়াসীনকে মৃদু ভৎসনা করে, ‘গোলাপ কেন? এগুলোর জন্য নিশ্চয়ই তোমার অনেক খরচ হয়েছে!’ তারপর থেকে তিনি নিজেকে মানিয়ে নিয়েছেন।যখন গোলাপের তোড়া আনতে ইয়াসীনের দেরি হয়, তখন তিনি গোলাপের অনুপস্থিতি অনুভব করেন । একসময় গোলাপ শুকিয়ে যেত, কিন্তু তিনি সেই শুকনো গোলাপ রেখে দিতেন এবং তাজা গোলাপের তোড়ার জন্য অপেক্ষা করতেন।
‘জানো, আমি এখন গোলাপের জন্য প্রতীক্ষায় থাকি, যেমন বৃষ্টির জন্য অপেক্ষায় থাকে বৃক্ষরাজি।আমি যখন তাজা গোলাপের তোড়া দেখি, তখন আমার হৃদয় আনন্দে নেচে উঠে।
‘আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি, ফুলদানি কখনই গোলাপ ছাড়া থাকবে না ।’

‘কিন্তু রামালাহ থেকে ফুল আনতে তোমার কী কষ্ট হয় না?’
‘না, তবে যাত্রীদের কাছ থেকে আমি যে চোখের চাহনি দেখি, তা আমাকে কষ্ট দেয়। উম্ম ওয়ালিদ, এটা আমাকে বিভ্রান্ত করে যে, অনেকে বস্তা ভর্তি মোলোখিয়া৭ বা পেঁয়াজ বহন করে জেনিন থেকে রাফা৮ পর্যন্ত, কিন্তু যাত্রীরা কেউ তাদের দিকে তাকায় না।অথচ আমি যখন গোলাপের তোড়া নিয়ে আসি, তখন সবাই আমার দিকে এমনভাবে তাকায় যেন আমি আমার জন্মদিনের পোশাক পড়ে আছি।’
‘তুমি কী বিব্রত বোধ করো?’

‘না, এটা আমাকে কখনো বিব্রত করে না।তবে যা আমাকে বিরক্ত করে, তা হলো গোলাপগুলো খুবই অপরিচিত মনে হয়।যে মুহূর্তে আমরা রামালাহ ছেড়ে রওনা হই, তখনই নিঃস্তব্ধতা দখল করে নেয় এবং আমি যেন তাদের তাত্ত্বিক কথাবার্তা এবং প্রশ্ন শুনতে পাই: “গোলাপ গুচ্ছ তার স্ত্রীর জন্য,” একজন ভাবে।অন্যদিকে আরেকজন মনে করে: “আজকাল কেউ তার স্ত্রীকে গোলাপ দেয় না।সে অবশ্যই কোন বিয়ের অনুষ্ঠানে বা জন্মদিন যাচ্ছে” এবং তৃতীয় জনের ভাবনা: “এটা কী সেই শিয়ালের পুরোনো গল্প যে সে ভুলে গেছে যে, সে আর কিশোর নয় এবং প্রেমে পড়েছে?!”
‘ওহ, ইয়াসীন, সৃষ্টিকর্তা তোমার প্রতি সদয় হোন।মানুষেরা দয়ালু এবং তাই তারা এরকম ভাবে না !’
‘মানুষ – শুধু এখানেই নয়, অন্য অনেক জায়গায় – দয়ালু হওয়ার চেয়ে অভিশাপ দেওয়া সহজ বলে মনে করে।
‘অবশ্যই না ।’
‘কিন্তু আপনি তো যুদ্ধ বিমান থেকে বোমা ফেলতে দেখেছেন, তাই না?’
‘মাঝে মধ্যে।’
‘দেখছেন! পৃথিবী কি রকম অদ্ভূত! আপনার কি অবস্থা! মানুষের সম্মুখে আবু ওয়ালিদকে কতবার বলেছেন যে, আপনি তাকে ভালোবাসেন?’
‘হায় সৃষ্টিকর্তা! মানুষের সম্মুখে? এমনকি আমি তাকে কখনও বলিনি যে, আমি তাকে নিভৃতে ভালোবাসি!’
‘হা! কিন্তু আপনি যদি তাকে ভালোবাসেন, তাহলে মানুষের সম্মুখে বলছেন না কেন?’
‘তুমি কী তাদেরকে বলাতে চাও যে, আমি একজন উন্মাদ?’
‘দেখছেন! আমি তাই বলার চেষ্টা করছি।সুন্দর জিনিসের প্রতি আমাদের শরম সত্যিকারের লজ্জাকর হায়াকে ছাড়িয়ে যায়।যাহোক, আমি আপনার জন্য গোলাপ আনা অব্যহত রাখব এবং যারা বিষয়টি অদ্ভুত মনে করে, তাদেরকে মানসিক যন্ত্রণায় ফেলতে চাই এবং বুঝাতে চাই যে, আমি ফুলগুলো রামালাহ থেকে বহন করে নিয়ে যাচ্ছি।’

‘তুমি কী মনে করো, এমন মানুষ আছে যারা এটাকে অদ্ভূত মনে করে না?’
‘মাঝে মাঝে।একবার, কিছুক্ষণ আমার দিকে এবং গোলাপ গুচ্ছের দিকে তাকিয়ে থাকার পরে, একজন মহিলা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আমাকে বলেছেন: “আমি তাকে ঈর্ষা করি, তিনি ভাগ্যবান।” আমি তাকে জিজ্ঞেস করি, “আপনি তাকে বলতে কাকে বোঝাচ্ছেন ?” জবাবে তিনি বলেছেন, “যার জন্য আপনি গোলাপ গুচ্ছ নিয়ে যাচ্ছেন।” আমি তাকে বলেছি, “না, বরং তাকে পেয়ে আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি।” অবশেষে মহিলা বলেছেন: “তাহলে তিনি দ্বিগুণ ভাগ্যবান, আপনাকে পেয়ে এবং আপনার গোলাপের তোড়া পাওয়ার জন্য।’”
তারপর উম্ম ওয়ালিদ ইয়াসীনের দিকে তাকান: ‘তুমি কেন শান্ত হচ্ছ না, ইয়াসীন?’
‘বিশ্বাস করুন, আমি যদি শান্ত হই, তাহলে উন্মাদ হয়ে যাব।’

মেঘের ফাঁকে দুপুরের সূর্য্য জ্বলজ্বল করছে।মহিলার বাড়ির নীচের উঠানে সামনের দুটি বাদাম গাছের ছায়া এখন নেই।গাছের নিচে ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যুতের লাইনের উপরে ওড়াউড়ি করা বাড়ির এক ঝাঁক চড়ুই পাখি সাবধানে বাচ্চাদের জন্য উঠান পরিষ্কার করার কাজ দেখছিল। উম্ম ওয়ালিদ দূরে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে ছিলেন।তিনি অপরিস্কার উঠানে খেলায় ব্যস্ত বাচ্চাদের পাশ কাটিয়ে তাকান; স্বাভাবিকের চেয়ে আজ তাদের সংখ্যা কম।অনেক উঁচু আকাশের দিকে তাকিয়ে তিনি তিনটি ঘুড়ি উড়তে দেখেন।তারপর তিনি তার প্রতিবেশীর জানালার দিকে চোখ সরিয়ে নেন।ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে জানালার কাঁচ ভেঙে গিয়ে পিছনের বাচ্চাদের আঘাত হানতে গিয়েছিল।সেখানে সবাই স্কুলে যাওয়ার আগে তাদের মায়ের প্রাতঃরাশ করার জন্য অপেক্ষা করছিল ।

উম্ম ওয়ালিদ পুনরায় দূরের দিকে তাকান।তিনি বাচ্চাদের খেলা দেখেন । আজ তার মনে হচ্ছিল, বাচ্চারা প্রথমবার খেলে যে ধরনের আনন্দ অনুভব করে, তারা সেই খেলা খেলছে।তিনি জানতেন না যে, একটি বল তাড়া করার জন্য দুটি দলে কয়জন করে খেলোয়ার থাকে।তাই তিনি দূরান্তে তাকিয়ে থাকেন …
বাচ্চাদের চিৎকার-চেঁচামেঁচিতে উম্ম ওয়ালিদের সম্বিত ফিরে আসে। চটজলদি তিনি তার দৃষ্টি আবু ওয়ালিদের দিকে প্রসারিত করেন।আবু ওয়ালিদ যেখানে বসেছিলেন, তার শেষ প্রান্তে তিনি দৃষ্টি আটকে রাখেন। আবু ওয়ালিদের সঙ্গে একদল লোক ছিল, যারা উম্ম ওয়ালিদের কাছে এতটাই পরিচিত ছিল যে তাদের কথাবার্তার সম্ভবত প্রতিটি শব্দ তিনি অনুমান করতে পারেন।
উম্ম ওয়ালিদ এবং আবু ওয়ালিদ ও তার সঙ্গীদের মাঝে একশ’ পঞ্চাশ, হয়তো বা দুইশ’ মিটার দূরত্ব ছিল, কিন্তু তারচেয়ে বেশি নয়।
রাস্তার শেষের দিকে উম্ম ওয়ালিদের অত্যন্ত পরিচিত আওয়াজ তার মনোযোগ আকর্ষণ করে।সেনাবাহিনীর টহল।রাস্তায় চারটি জিপ গর্জন করতে করতে তাদের দিকে এগিয়ে আসতে থাকে।গাড়ির কালো ধোঁয়ায় সরু গলির মধ্যে দমবন্ধ করা পরিবেশ সৃষ্টি হয়।পুনরায় তারা সেখানে সব দখল করে আছে।
ইয়াসিনের মুখ উম্ম ওয়ালিদ দৃষ্টির সীমানা ছেড়ে অদৃশ্য হয়ে যায়।
জিপের কোলাহল উম্ম ওয়ালিদকে তাদের সরু রাস্তায় ফিরিয়ে আনে। জিপগুলো তার বাড়ির পাশে উত্তর দিকে কাছাকাছি কোথাও পার্ক করা আছে।

কিন্তু বাচ্চারা খেলা বন্ধ করেনি।তারা এমনভাবে খেলা চালিয়ে যেতে থাকে যেন তাদের খেলার জায়গাটি কখনো কোন সৈনিক দেখেনি। সেখানে তারের উপরে চড়ুই পাখিদের ডানায় যে সতর্কতা ফুটে উঠেছিল, তা ছিল লক্ষণীয়।
উম্ম ওয়ালিদ তার দৃষ্টি উঠানের দূরের দিকে সরিয়ে নিয়েছিলেন। দেয়ালের অন্য প্রান্তের ঘটনা উপলব্ধি করে লোকজন গল্প করা বন্ধ করে দিয়েছিল।তারা ঘটনার কিছুই জানত না।তবে কিছুটা আশ্বস্ত হয়েছিল যে বাচ্চারা তখনো খেলছিল।
আবু ওয়ালিদকে দূর থেকে হাত নাড়তে দেখে উম্ম ওয়ালিদও হাত নাড়েন।সৈনিকেরা তাদের অঙ্গভঙ্গি লক্ষ্য করছিল।ইয়াসীনের মুখ আবারও পাশ কেটে যায়, কিন্তু এবার তা অদৃশ্য হয়ে যায়নি।উম্ম ওয়ালিদ তাকে সিঁড়ি দিয়ে নীচের উঠানের দিকে যেতে দেখেন এবং এক মুহূর্তের জন্য তিনি উঠানটি কল্পনা করেন, যেমনটি সবসময় ছিল, সবুজ এবং পরিপাটি।

উম্ম ওয়ালিদ শুনতে পেলেন নিজের কণ্ঠস্বর শরীরের মধ্য দিয়ে নদীর মতো প্রবাহিত হচ্ছে।তিনি ডাকেন, ‘আবু ওয়ালিদ!’ তখন তার মনে হয় সেই ডাক যেন তার হৃদয়ের গভীরতা থেকে উঠে আসছে এবং ফুসফুস ভরে দিচ্ছে।
উঠানের অন্য প্রান্ত থেকে কণ্ঠস্বর ভেসে আসে, যেন সে উম্ম ওয়ালিদের ডাকের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে আছে: ‘কী হয়েছে?’
‘আমি তোমাকে ভালোবাসি, আবু ওয়ালিদ।আমি তোমাকে ভালোবাসি!’
সৈন্যরা এই বয়স্কা মহিলাকে তার পুরুষকে ডাকতে দেখছিল, তার আগে তাদের চোখ অন্য দিকে চলে যায় এবং দেখে লোকটি জিজ্ঞেস করছে, ‘কী?’
‘আমি তোমাকে ভালোবাসি,’ উম্ম ওয়ালিদ পুনরায় বললেন।
আবু ওয়ালিদ মাথা নাড়েন।তিনি কিছুটা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকান।কিন্তু তার সঙ্গীদের মুখের ভাষা পড়ার সময় তার চোখ অস্বাভাবিক ঝলকের সঙ্গে জ্বলজ্বল করছিল।
একসময় উম্ম ওয়ালিদ মাথা তোলেন।এক মুহূর্তের জন্য তার মনে হল বাচ্চারা খেলা বন্ধ করে দিয়েছে, এবং চড়ুইরা বুঝতে পারছিল না কোন দিকে উড়ে যাবে।
সৈনিকেরা নিঃশ্বাস বন্ধ করে রেখেছিল।

আবু ওয়ালিদ বুঝতে পেরেছিলেন যে, পুরো পৃথিবী থেমে গেছে এবং তার জন্য অপেক্ষা করছে।তিনি উঠানের দূরের দিকে তাকান, যেখানে পাইন গাছের মতো গর্বিত এবং দীর্ঘাঙ্গী একজন মহিলা তার জন্য অপেক্ষা করছিল । আবু ওয়ালিদ তাকে বললেন:
‘আমি তোমাকে ভালোবাসি, উম্ম ওয়ালিদ!’
‘কী?’ উম্ম ওয়ালিদ জবাব দেন, যদিও তিনি প্রথমবার জোরে এবং পরিস্কার শুনেছিলেন ।
‘আমি তোমাকে ভালোবাসি ।’
এবং সবকিছু মিটমাট হয়ে যায় ।

আবু ওয়ালিদ নীরবতাকে পর্যবেক্ষণ করেন যে, তার কণ্ঠস্বর যেন মহাশূন্যে সৃষ্টি হয়েছে । ‘উম্ম ওয়ালিদ বার্তা পেয়েছেন, যা ছিল জোরে এবং স্পষ্ট ।’ তিনি নিজের আসনে ফিরে এসে নীরব আনন্দে নিজেকে ফিসফিস করে বললেন । একই সময়ে টহলরত সৈনিকটি বিভ্রান্তিতে মাথা নাড়ে: ‘একজন বৃদ্ধ এবং আরেকজন বৃদ্ধা, একে অপরের প্রতি আমি তোমাকে ভালবাসি বলে চিৎকার করছে।পাগল আর অশ্লীল ফিলিস্তিনিরা ।’
যেন উম্ম ওয়ালিদের মধ্যে পাইন গাছটি হঠাৎ আরও উঁচু হয়ে বেড়ে যায় এবং তিনি নিজেকে অন্য দিনের চেয়ে দীর্ঘাঙ্গী অনুভব করেন । উঠানের অন্য দিকে তার সহানুভূতিশীল দৃষ্টি ছড়িয়ে পড়ে । উম্ম ওয়ালিদ টহলরত সৈনিকদের অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকেন ।

পাদটীকা: মূল গল্পে যেভাবে ছিল, সেভাবেই দেওয়া হয়েছে, তবে সামান্য হেরফের করে– অনুবাদক ।
১ আরবদের নিয়ম অনুযায়ী নামের আগে ‘উম্ম’ এবং ‘আবু’ যথাক্রমে ‘মা’ এবং ‘বাবা’ বোঝায় এবং সাধারণত তাদের বড় ছেলের নাম অনুসরণ করে ।
২ আরবীতে ‘আহলান ওয়া সাহলান’ অর্থ ‘স্বাগতম’ । তবে খুবই জোরালো ভাবে ব্যবহার করা হয়, যেমন ‘আপনি পরিবারের সদস্য হিসেবে আমাদের মধ্যে আছেন এবং আমাদের সঙ্গে আপনার থাকা কখনই বোঝা নয়’ ।
৩ পুরো বাক্যটি সামাজিক রীতির এক ধরনের আরোপণ, যেখানে অবিবাহিত পুরুষদের মায়েরা যুবতী মেয়েদের পরিবারের কাছে অনুসন্ধান করতে যান বলে জানা যায়; কিন্তু এখানে এটা বিপরীত ভাবে ব্যাহার করা হয়েছে ।
৪‘ওয়াদি আল-হারামিয়া’-তে ইজরায়েলি সামরিক চেকপয়েন্ট, যা চোরদের উপত্যকা হিসেবে পরিচিত ।
৫গাধার আরবি শব্দ, কিন্তু ইজরায়েলিরা ভুল উচ্চারণ করে ।
৬ইজরায়েলিদের ভুল উচ্চারণ ‘খাবিবি’, আসলে আরবীতে শব্দটি ‘হাবিবি’, যার আক্ষরিক অর্থ ‘আমার ভালোবাসা’, কিন্তু সাধারণভাবে ‘সঙ্গী’ বোঝায় ।
৭ একধরনের পুষ্টিকর ‘করকোরাস অলিটোরিয়াস’ প্রজাতির পাতাযুক্ত উদ্ভিদ, যা সাধারণত লেভান্ট, মিশর এবং সাইপ্রাসের অংশজুড়ে পাওয়া যায় এবং গাঢ় সবুজ স্যুপের মতো খাবার তৈরিতে ব্যবহৃত হয় ।
৮ জেরিন পশ্চিম তীরের সবচেয়ে উত্তর দিকের শহর এবং রাফা গাজা স্ট্রিপের সুদূর দক্ষিণে অবস্থিত । এই পথে যাতায়াতের উপর ইজরায়েলিদের বিধিনিষেধের কারণে ফিলস্তিনিদের অতিরিক্ত বিড়ম্বনার শিকার হতে হয় ।

লেখক পরিচিতি: আরব বিশ্বেরসবচেয়ে পঠিত লেখকদের মধ্যে ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত জর্ডানের লেখক ইব্রাহিমনাসরাল্লাহ অন্যতম । একাধারে তিনি একজন ঔপন্যাসিক, গল্পকার, কবি এবংঅঙ্কন ও চিত্রশিল্পী।তার জন্ম ১৯৫৪ সালে জর্ডানের রাজধানী আম্মানে। উল্লেখ্য, ১৯৪৮সালে ফিলিস্তিন থেকে তার পরিবারকে উচ্ছেদ করা হয়েছিল।তিনি জর্ডানের একটি শরণার্থী শিবিরে শৈশব ও যৌবন অতিবাহিত করেন এবং সৌদি আরবে শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে তিনি আম্মানে ফিরে এসে মিডিয়া ও সাংস্কৃতিক অঙ্গণে কাজ করেন।তিনি ২০০৬ সালে লেখালেখিকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন । তিনি পনেরটি কবিতা সংকলন, একুশটি উপন্যাসসহ বেশ কয়েকটি গ্রন্থ প্রকাশ করেন।বিগত আড়াই শ’বছরের আধুনিক ফিলিস্তিনি ইতিহাসকে নিয়ে ১৯৮৫ সালে তিনি ‘প্যালেস্টিনিয়ান কমেডি’ উপন্যাস রচনা করেন।তার বিভিন্ন লেখা ইংরেজি, ইতালীয়, ড্যানিশ, তুর্কি এবং ফার্সি ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে। সাহিত্যকর্মের জন্য তিনি একাধিক পুরস্কার লাভ করেন, যেমন ২০১৮ সালে ‘দ্যসেকেন্ড ওয়ার অব দ্য ডগ’ উপন্যাসের জন্য ‘ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ ফর অ্যারাবিক ফিকশন’ (‘আরবি বুকার’ পুরস্কার হিসেবে পরিচিত)।

গল্পসূত্র: ‘রামালায় প্রেম’ গল্পটি ইব্রাহিম নাসরাল্লাহর ইংরেজিতে ‘লাভ ইন রামালাহ’ গল্পের অনুবাদ। আরবি থেকে গল্পটি ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন মোহাম্মেদ ঘালাইনি।গল্পটি ২০২১ সালে প্রকাশিত এবং মায়া আবু আল-হায়াত সম্পাদিত ‘বুক অব রামালাহ: অ্যা সিটি ইন শর্ট ফিকশন’ছোটগল্প সংকলনে অন্তর্ভুক্ত এবং সেখান থেকে বাংলায় অনুবাদ করা হয়েছে ।